“পরিশ্রম আর বুদ্ধি দিয়ে দুঃখের দিন পার করে এখন সুখেই আছি, তাই এলাকার মানুষ আমার সুনাম করে”-কথাগুলো যশোর সদর উপজেলার দোয়াগাছিয়া গ্রামের মোছা. রোকসানা বেগমের (৩০)। বাবা-মায়ের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হওয়ায় নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায় রোকসানার। স্বামীর সংসারে গিয়েও রোকসানা সুখের মুখ দেখতে পায় না। অভাব-অনটনকে নিত্যসঙ্গী করে দিন কাটতে থাকে। এরই মধ্যে তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তান, দুই বছর যেতে না যেতেই সংসার আলোকিত করে আসে দ্বিতীয় সন্তান। কষ্টের সংসারে দুটি সন্তান লালনপালন করাসহ সাংসারিক খরচ চালানো তার স্বামীর পক্ষে আরো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।
একটু ভালো থাকার আশায় স্বামী মো. আম্মার আলী পৈত্রিক জমিতে চাষাবাদ শুরু করলেও অভিজ্ঞতা না থাকায় তা লাভজনক হয় না। গরু লালন-পালন করে অনেকের অবস্থা ফিরেছে, রোকসানা বেগম এমন কয়েকজনের সাফল্যের কথা স্বামীকে জানালে উভয়ে মিলে গরুর ফার্ম করার পরিকল্পনা করেন। এক্ষেত্রে মূল বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধন, আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে রোকসানা দম্পতি। এমন অবস্থায় প্রতিবেশী রিংকির সাথে কথা বলে জানতে পারেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন গরু লালন-পালনে সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তাও প্রদান করে থাকে। এরপর যশোরের চুড়ামনকাঠি শাখার দোয়েল মহিলা সমিতিতে যুক্ত হয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। এর সাথে নিজেদের জমানো কিছু টাকা দিয়ে দুটি গাভি কেনেন। নয় মাসের মধ্যে দুটি গাভিই বাচ্চা প্রসব করে এবং প্রায় দেড় বছর পরে দুটি গরু ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করে আরো দুটি গাভি গরু কেনেন। বর্তমানে চারটি গরু প্রতিদিন প্রায় ১২-১৪ লিটার পরিমাণ দুধ দেয়।
এক বছর পরে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য পুনরায় ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে আরো দুটি এঁড়ে গরু ক্রয় করেন। দ্বিতীয়বারের ঋণ পরিশোধ করে ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ আবার ১ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে ফামের্র পরিচর্যায় বিনিয়োগ করেন। সর্বশেষ ২০২৩-এর অক্টোবরে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের জন্য ৩ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এছাড়া রোকসানা ওয়েভ ফাউন্ডেশন হতে গরু পালনের উপর উন্নত প্রশিক্ষণও নিয়েছেন। রোকসানা দম্পতি সম্প্রতি গরু বিক্রয় ও খামারের আয় দিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে ১৮ কাঠা ধানের জমি ক্রয় করেছেন। এভাবেই ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় প্রতি বছর ঋণ নিয়ে গাভী পালন ও গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প সম্প্রসারণ করেছেন। বর্তমানে তাদের খামারে মোট ১২টি গরু রয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫-১৬ লক্ষ টাকা। দুধ বিক্রি এবং গরু বিক্রি করে প্রতি মাসে তাদের গড়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
আগে গ্রামে রোকসানা বেগম এবং তার স্বামীর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তেমন না থাকলেও এখন এলাকা জুড়ে তাদের পরিচিতি, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ডাক পেয়ে থাকেন। এলাকার অনেকেই তাদের গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প দেখতে ও কাজ শিখতে আসেন। তাদের অনুসরণ করে অনেক উদ্যোক্তা এখন গরুর খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন। রোকসানা বেগম তাদের উন্নয়নের জন্য গর্ববোধ করেন এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে সংসারে সাফল্য ও আর্থিক স্বচ্ছলতা আসায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।