নাজমা বিশ্বাস করতে শিখেছে, সমাজে নারীরাও উন্নতি করতে পারে
গরীব বাবার সংসারে মাত্র ১৫ বছর বয়সে নাজমার বিয়ে হয়। স্বামী মো. কামাল মৃধার পরিবারের অবস্থাও ভাল ছিল না। এখন নাজমার বয়স৪০ বছর। তাদের বাড়ি ছিল বরিশাল জেলার গৌরনদী থানার পিপড়াকাঠি ইউনিয়নে। ২২ বছর আগে নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে খুলনাররায়েরমহলে নাজমা পরিবারসহ খালার বাড়িতে চলে আসে। দিনমজুরের কাজ করে অনেক কষ্টে নাজমা তার দুই ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়েছেন।ছেলে, তাদের দুই বউ, নাতিসহ অনেক বড় সংসার এখন নাজমার। ছোট ছেলে একবার এসএসসি ফেল করে আর পড়ালেখা করেনি। সে কোনকাজ করে না। আর বড় ছেলে সজল ঢাকাতে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করে। তার একার উপার্জনেই অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তাদেরসমস্ত সংসারের খরচ চলে।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে নাজমা ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘জলবায়ুর প্রভাবে খুলনা মহানগরে স্থানান্তরিত অভিবাসী ও দরিদ্রপরিবারসমূহের অভিযোজিত জীবন-জীবিকার উন্নয়নে ছাগল পালন’ প্রকল্প বিষয়ে জানতে পারেন। পরবর্তীতে প্রকল্পের দলীয় আলোচনায়অংশগ্রহণ করে নাজমা আরও জানতে পারেন, এ এলাকায় যারা গরীব এবং জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বসতি গড়েছে তাদেরকে সংস্থা থেকেমাচাসহ ছাগল দেয়া হবে। এ কথা শুনে নাজমা বেগম আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এই প্রকল্পে যুক্ত হন।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসেই কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে দুইটি মা ছাগল ও একটি মাচাসহ ছাগল ঘর অনুদান হিসেবে পায়। পরবর্তীতে মাচাপদ্ধতিতেছাগল পালন বিষয়ে ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কীভাবে ছাগল পালন করতে হয়, কীভাবে ছাগলের খাবার দিতে হয় এবং কখন টিকা দিতেহয় এসব বিষয়ে নাজমা আরও ভালভাবে জানতে পারেন। কিছুদিন পর তার ২টি ছাগলই গর্ভবতী হয়। ওয়েভ-এর প্রকল্পকর্মীর পরামর্শে বাড়তিযত্ন নেয়ায় ৫ মাস পরে দুইটি ছাগলের ৪টি খাসি বাচ্চা হয়। বর্তমানে তার খামারে ৬টি ছাগল আছে, যার মূল্য প্রায় ৩৯ হাজার টাকা। বর্তমানেসবগুলো ছাগলই সুস্থ আছে।
নাজমার স্বামী প্রতিদিন মাঠ হতে ঘাস কেটে নিয়ে আসে আর বাজার হতে গমের ভুষি, চাউলের কুঁড়া, ভুট্টা ভাঙ্গা ও অটো পালিশ কিনে নিয়েআসে, যাতে তাদের ছাগলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নাজমা বলেন, “এভাবে ছাগল পালন করে খামারে ছাগল আরও বাড়াতে চাই। ছাগল পালনকরে সংসারের অভাব দূর করতে চাই। এভাবে মাচা পদ্ধতিতে যদি ছাগল পালন করি তাহলে ভবিষ্যতে আমার স্বপ্নপূরণ হবে।” এখন বাড়িতেহাঁস, মুরগি ও কবুতর পালন করছেন তিনি। ফলে পরিবারে বাড়তি আয় হচ্ছে। নাজমা বলেন, “আমি সংসারে আরও উন্নতি করতে চাই। তাহলেসামান্য কোন প্রয়োজনে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও জিআইজেডকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তারা আমাকে সাহায্যকরেছে। নারী হিসেবে নিজে কিছু করতে পারার বিশ্বাস ও শক্তি যুগিয়েছে।”