ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে প্রতিবন্ধী রাজ্জাক এখন সাবলম্বী

 In Blog

ওয়েভ ফাউন্ডেশনের দিয়া টাকায় আমার যে কী উপকার হইচে, আর একুন আমি যে কত খুশি তা একমাত্র আল্লাই জানে– কথাগুলো আবেগাপ্লুত হয়ে বলছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের মৃত হযরত আলী ও বারিছন নেছার তৃতীয় সন্তান প্রতিবন্ধী মো: আব্দুল রাজ্জাক।

১৯৬৭ সালের ১০ মার্চ একটি অতিদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া আব্দুল রাজ্জাক জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী ছিলেন না। নিজস্ব মিশুক পরিবহন চালিয়ে ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদিন নিজের জমিতে কাজ করার সময় বিষাক্ত পোঁকার কামড়ে ডান পায়ের আঙ্গুলে খত হয়ে পঁচন ধরে তিন সন্তানের জনক রাজ্জাকের। পায়ের পঁচন ঠেকাতে ও জীবন বাঁচাতে চিকিৎসক অপারেশনের মাধ্যমে উরু পর্যন্ত কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। পায়ের চিকিৎসায় সর্বস্ব হারানো এবং পঙ্গুত্বকে বরণ করে নেয়া রাজ্জাক পরিবারকে বাঁচাতে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। ভিক্ষাবৃত্তি তার মধ্যে মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা ও অসহায়ত্ব তৈরি করে। এমন সময় পিকেএসএফ-এর সহায়তায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে আব্দুল রাজ্জাককে উদ্যোমী সদস্য (ভিক্ষুক) হিসেবে পুনর্বাসনের জন্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে পুনর্বাসনের জন্য তাকে সমৃদ্ধি ওয়ার্ড কমিটির মাধ্যমে ১টি বাছুরসহ গাভী ও গোয়াল ঘর, গরুর খাবার, ২টি বাচ্চাসহ ১টি ছাগল, ঘরসহ ৭টি মুরগি, ঘরসহ ১০টি কবুতর, উন্নত চুলা, স্যানিটারি ল্যাট্রিন, রান্নাঘর, সবজির বীজ ইত্যাদি প্রদান করা হয়। গত তিনবছরে বাঁকা ইউনিয়নের সমৃদ্ধি কর্মসূচির কর্মকর্তা ও স্থানীয় সমৃদ্ধি ওয়ার্ড কমিটির নিয়মিত তত্ত্বাবধানে রাজ্জাক ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে প্রাপ্ত সহায়তার যথাযথ ব্যবহার এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ সাবলম্বী। বর্তমানে বড় বাছুরসহ ১টি গাভী যার বাজার মুল্য প্রায় ১ লক্ষ টাকা, ২টি পাঠা ছাগল যার মূল্য প্রায় ৮০ হাজার টাকা, ২টি বাচ্চাসহ ৪টি ছাগলের মূল্য প্রায় ২৫ হাজার টাকা, ২০টি দেশি হাঁস, ৪০টি কবুতর, ১৫টি দেশি মুরগি, বাড়িতে শাকসবজির বাগান, ফলজ ও ঔষধি গাছসহ তার বাড়িতে এখন প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ আছে। এছাড়াও ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে চাষাবাদের জন্য ১০ কাঠা জমিও বন্ধক নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি কিছু টাকা বিনিয়োগ করে স্যালো মেশিন মেরামত করার যন্ত্রপাতি কিনেছেন, যা থেকেও নিয়মিত আয় করছেন। বর্তমানে বিভিন্ন উৎস থেকে গড়ে তার মাসিক আয় প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা।

প্রতিবন্ধী হবার কারণে তার আজকের এই অর্জনের পথটি মসৃণ ছিল না। এ অবস্থানে পৌঁছাতে তাকে সাহায্য করেছে তারপ রিবারের সকল সদস্য। তার স্বপ্ন-টিনের চালের ঘরটিতে ছাদ দিবেন। এখন তার পরিবার আর ভিক্ষা করে না। সমাজের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করছেন। আজকের এই অবস্থান তৈরিতে পাশে থেকে সহায়তা করার জন্য আব্দুল রাজ্জাক ওয়েভ ফাউন্ডেশন এবং পিকেএসএফ-কে ধন্যবাদ জানান।

Recent Posts

Leave a Comment

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt