সমাজসেবা কার্যালয়ের সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ৬ মার্চ ২০২২ মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন সমাজ কর্মী, ইউনিয়ন পরিষদ ও লোকমোর্চার সদস্যবৃন্দসহ উপকারভোগীগণ এতে অংশগ্রহণ করেন। গণশুনানিতে সামাজিক নিরীক্ষায় প্রাপ্ত সমস্যাবলী উপস্থাপনের পাশাপাশি লোকমোর্চার পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা বা সুপারিশ প্রদান করা হয়। উপকারভোগী ও লোকমোর্চার উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদ নিরীক্ষায় প্রাপ্ত সমস্যার সমাধান এবং উপকারভোগীদের সেবা প্রাপ্তির মানকে ত্বরান্বিতকরণে কিছু কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

নিরীক্ষা কার্যক্রমের জন্য শ্রীপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের (শ্রীপুর, দ্বারিয়াপুর, কাদিরপাড়া, নাকোল, শ্রীকোল, সব্দালপুর, আমলসার এবং গয়েশপুর) ৭২টি ওয়ার্ডের ৭২০ জন উপকারভোগীর (বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী এবং কৃষক) কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফরমেটের আলোকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ইউনিয়ন লোকমোর্চার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দ এবং প্রত্যেক ওয়ার্ডের কমিউনিটি গ্রæপের সভাপতি/সম্পাদকসহ মোট ৬৮জন সদস্য এই কার্যক্রম পরিচালনা করেন। প্রতিটি সামাজিক নিরীক্ষায় ৬সদস্য বিশিষ্ট ১টি দল কাজ করে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৬৫৫ জন এবং সরকারি কৃষি সেবার আওতায় ৬৫ জন উপকারভোগীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এবং তাদের মতামত ও সন্তষ্টি লিপিবদ্ধ করা হয়। উপকারভোগীদের মধ্যে বয়স্ক: ২৮৩ জন (পুরুষ: ১৮৮ নারী: ৯৫), বিধবা: ২০২ জন, প্রতিবন্ধী ১৭০ জন (পুরুষ: ৮৫ নারী: ৮৫) এবং কৃষক ৬৫ জন (পুরুষ ৬৫)।

উপকারভোগীদের সমস্যা ও সন্তষ্টির মাত্রা নিরূপণে বেশকিছু প্রশ্নের আলোকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কিছু উল্লেখযোগ্য সমস্যা চিহ্নিত হয়। সমস্যাসমূহ যথাক্রমে: ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত হওয়া স্বত্বেও অনেক দিন পরে ভাতা পেয়েছেন; ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন; মোবাইল ব্যাংকিং জটিলতার কারণে বেশকিছু উপকারভোগী টাকা পাননি; ইউনিয়ন উপকারভোগী যাচাই-বাচাই কমিটি সম্পর্কে ধারণা কম; কৃষি প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে একই কৃষক বার বার সুবিধা পাচ্ছেন; প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে দরিদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকের প্রাধান্য কম; কৃষি বিষয়ক ইউপি স্থায়ী কমিটি সক্রিয় না ইত্যাদি।

উল্লিখিত সমস্যার সমাধান এবং দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা প্রাপ্তির মান উন্নয়নে গণশুনানিতে লোকমোর্চার পক্ষ থেকে বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। যেমন: যাদের প্রতিবন্ধী কার্ড আছে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা; বয়স্ক ভাতাভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনা করে চূড়ান্ত করা; মোবাইল ব্যাংকিং এর জটিলতা নিরসনের কৌশল নির্ধারণ করা; বিধবা মহিলাদের আয়-বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা; ইউনিয়ন সমাজকর্মীর মাঠ পরিদর্শনের হার বাড়ানো; বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার যাচাই-বাছাই কমিটি সম্পর্কে উপকারভোগীদের জানানোর ব্যবস্থা করা; ভিজিডি চালের বরাদ্দ আসলে দরিদ্র মহিলাদের অগ্রাধিকার দেওয়া; আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণে কৃষকদের নিয়ে উঠান বৈঠকের ব্যবস্থা করা; প্রান্তিক-দরিদ্র কৃষকদের অগ্রাধিকার দিয়ে কৃষি প্রণোদনার ব্যবস্থা করা; ইউপি কৃষি বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটিসহ সকল কমিটির সভা নিয়মিত করা এবং লোকমোর্চার ১জন সদস্য কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা। উল্লিখিত প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় ইতিমধ্যে ১৩৭ জন উপকারভোগীর মোবাইল নম্বর ঠিক করেছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদসমূহ ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিছু বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ বাদ পড়াদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেছে।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt