চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কেডিকে ইউনিয়নের দেহাটি গ্রামের অবহেলিত নারী ফতেনূর বেগম (৬২)। ছেলে, পুত্রবধূ, দুই নাতী ও নাত-বৌ নিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। স্বামী খোদা বক্স ছিলেন একজন ভিক্ষুক। খোদা বক্স লোক মারফত একদিন জানতে পারেন, ওয়েভ ফাউন্ডেশন ভিক্ষুক পুনর্বাসনে সহায়তা করে থাকে। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যের মাধ্যমে সংস্থার সমৃদ্ধি প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভিক্ষুক পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে খোদা বক্সকে উদ্যোমী সদস্য হিসেবে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়া হয়।
এছাড়া আয়বর্ধক কাজ করার জন্য বাছুরসহ একটি গাভী, দুইটি মা-ছাগল, ১টি ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট এবং অবকাঠামোগত সহায়তা হিসেবে গোয়ালঘর তৈরি, রান্নাঘর মেরামত, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন স্থাপনসহ বাড়ির চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে খোদা বক্স মারা গেলে এ কমিটি সমৃদ্ধি প্রকল্প থেকে প্রদেয় সমস্ত সম্পদ ফতেনূর বেগমকে হস্তান্তর করেন।
পরবর্তীতে কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে ফতেনূর ছাগল বিক্রি করে বাড়ির আঙ্গিনার সাথেই দেড় বিঘা জমি ১৩ হাজার ৫০০ টাকায় বন্ধক নেন, যা এখনও বলবৎ আছে। বন্ধকী জমিতে বর্তমানে তিনি আলু, কলা, পেয়াজ-রসুন, বেগুন, লেবু, মেটেআলু, পালং শাক, লাল শাক, ওল-কচু, পেঁপে, সিম, টমেটো, সজিনা-নজিনা, হলুদ ইত্যাদি চাষ করছেন। সমৃদ্ধি থেকে দেয়া ভার্মি কম্পোস্ট প্লান্ট থেকে উৎপাদিত সার নিজের বন্ধকী জমিতে ব্যবহার করেন। পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সবজি-ফল বিক্রি করে মাসে প্রায় ২০০০ টাকা আয় করছেন। পাশাপাশি হাঁস, মুরগি ও কবুতর পালন করে সেখান থেকেও বাড়তি আয় করছেন।
প্রকল্প থেকে পাওয়া ২টি গরু লালন-পালন করে ফতেনূরের গরুর সংখ্যা আরও ২টি বেড়েছে। এর মধ্যে দুটি গরু ৬৮হাজার টাকায় বিক্রি করে এই টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে নাতিকে ফলের দোকান কিনে দিয়েছেন। যেখান থেকে মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে। অবশিষ্ট টাকার সাথে জমানো টাকা যুক্ত করে তিন গাড়ি ইট কিনেছেন পাকা বাড়ি করার জন্য। এ বয়সে এসেও ফতেনূরের অদম্য ইচ্ছা এবং কর্মস্পৃহা বদলে দিয়েছে তার পরিবারের চিত্র।
ফতেনূর বলেন, ‘আমি অহন সমাজে মাতা উচু করে চলতি ও কতা বলতি পারি। নিজেরে আর ছোট মনে হয় না। আমার ছেলে-বউরাও আমারে যতœ করে, বোঝা বলে না। ওয়েভের সহায়তায় নাতি-নাত-বৌ, ছেলে-বউ নিয়ে আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আচি।’