চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের শহিতন নেছা (৬৫) বিধবা হয়েছেন ১০ বছর আগে। মনের প্রফুল্লতা নিয়ে নিজের কর্ম-প্রচেষ্টায় এই বয়সেও ভালো থাকার প্রবল ইচ্ছা। দিনমজুর স্বামী মুনছুর তরফদার মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। অভাবের সংসারে চিকিৎসা করাতে না পারার যন্ত্রণা তাই এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন শহিতন নেছা। দুই পুত্র ও তিন কন্যার সবাই বিবাহিত। সবাই নিজ নিজ সংসারে দিনমজুরী করে দিনাতিপাত করে বলে শহিতন কখনো তাদের সংসারে বোঝা হতে চাননি।
শহিতন স্বামীর অভাবের সংসারে বাড়তি আয় বাড়াতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার পরে চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ায় এখন তা করেন না। সমৃদ্ধি প্রকল্পের ২নং ওয়ার্ড প্রবীণ কমিটির সদস্য হওয়ার সুবাদে অতি সম্প্রতি তিনি কমিটির অনুপ্রেরণায় নিজ বাড়িতে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশী মুরগী পালনে উদ্যোগী হয়েছেন। ওয়ার্ড প্রবীণ কমিটি ও সমৃদ্ধি’র সংশ্লিষ্ট এসডিও প্রথমে শহিতন নেছাকে ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচিধীন পরিপোষক ভাতাভূক্ত করেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত ভাতা থেকে কিছু সঞ্চয়ের টাকা ও বিত্তবান প্রবীণদের আর্থিক অনুদানসহ কারিগরি সহায়তা দিয়ে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশী মুরগী পালনের জন্য একটি ছোট্ট ফার্ম করেন। বর্তমানে তার ফার্মে ৫টি মা মুরগী ও উঠতি বয়সী ৯টি মিলে মোট ১৪টি দেশী মুরগী রয়েছে। মুরগীর ডিম বিক্রি করেও তার নিয়মিত কিছু আয় হয়।
কথা প্রসঙ্গে শহিতন নেছা বলেন, “সবে শুরু করেছি। আমি সফল হতে চাই, আরো বড় ফার্ম করতে চাই। আমাকে এ কাজে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ড প্রবীণ কমিটি সহযোগিতা করছে। আল্লাহ তাদের ভালো করুক, ভালো রাখুক।”
আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশী মুরগী পালন বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও পঁয়ষট্টি বছর বয়সী গ্রামীণ বিধবা নারী শহিতন নেছার আত্মবিশ্বাস, দৃঢ় প্রত্যয় ও স্বপ্ন দেখে একথা বলা যেতেই পারে, খুব দ্রুত তিনি ফার্মটিকে আরও বড় করে নিজেকে একজন ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবেন। তার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের যুবরা সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা করাই যায়। জয়তু শহিতন!