নারিকেলের ছোবড়া শুকিয়ে গুঁড়ো করে তৈরি করা হয় কোকোডাস্ট বা কোকোপিট, যা ব্যবহার করা হচ্ছে মাটির বিকল্প হিসেবে। উন্নত বিশ্বে কোকোডাস্টের ধারণা বেশ জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এটা অনেকটাই অপরিচিত। ১৯৮০ সালে নেদারল্যান্ডে প্রথমবারের মতো কোকোডাস্টের ব্যবহার করে গোলাপ ও লিলিফুলের চাষ করা হয়। ফলাফল আশ্চর্যজনক হওয়ায় এরপর থেকে বিশ্বের অনেক দেশেই কোকোডাস্ট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাটির তুলনায় কোকোডাস্ট ৩০% অধিক গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পানি ধারণ করতে পারে। এতে গাছের গোড়ায় পচন ধরে না। গবেষণায় দেখা গেছে, ১ কেজি কোকোডাস্ট ১৫ কেজির মতো পানি ধরে রাখতে পারে। পানি দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন পড়ে না। এতে গাছের চারা সবল থাকে, বৃদ্ধি খুব ত্বরান্বিত হয় এবং চারার শিকড় অনেক মজবুত হয়। চারার বিভিন্ন নিউট্রিশন গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
কোকোডাস্টে সবজির বীজের অঙ্কুরোধগম ক্ষমতা বেশি হয় এবং চারার মৃত্যু হার কম হওয়ায় বীজের পরিমাণ কম লাগে। চারার জন্য বীজতলায় অতিবাহিত সময়ের সাশ্রয় হয়। বন্যাপ্রবণ বা লবণাক্ত এলাকায় মাটি ছাড়া মানসম্মত চারা উৎপাদন সম্ভব হয়। মাটির তৈরী বীজতলার চেয়ে কোকোডাস্টে রোগ জীবাণুমুক্ত সুস্থ চারা উৎপাদিত হয়। সুস্থ, রোগমুক্ত ও অধিক জীবনীশক্তিসম্পন্ন (viable) চারা লাগানোর কারণে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।
ওয়েভ ফাউন্ডেশন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলায় গত দুই বছর ধরে কোকোডাস্ট নিয়ে কাজ করছে। সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের ৪০ জন সদস্যকে প্রথম পর্যায়ে কোকোডাস্ট তৈরির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরবর্তীতে তারা নিজেদের উৎপাদিত কোকোডাস্ট ব্যবহার করে চারা উৎপাদন করে জমিতে ব্যবহার করে। কোকোডাস্ট ব্যবহারে চারা নষ্টের হার কম হওয়ায় বীজও কম লাগে ফলে বীজের খরচ অনেকখানি কমে আসে। ৪০ জন সদস্য বর্তমানে তাদের উৎপাদিত চারার ৫০ ভাগই বিক্রি করছেন। এছাড়া জয়মন্টপ ইউনিয়নে সংস্থা কোকোডাস্টের চারা উৎপাদনকারী বেশ কিছু সমিতি বা পাড়া নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছে। কোকোডাস্ট ব্যবহারকারী কৃষকদের কম খরচে ভাল ফলন দেখে স্থানীয় অনেকেই আগ্রহী হয়ে চারা উৎপাদন শুরু করেছে।