তোয়া জন্মগ্রহণ করে স্বাভাবিক শিশুর মতোই। তবে কিছুদিন যেতেই তার শারীরিক গঠনে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায়। একজন শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক বিকাশ প্রত্যক্ষভাবে তার ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে। কাজেই শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এ লক্ষ্যে ওয়েভ ফাউন্ডেশন সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় সুবিধাবঞ্চিত বয়স্ক নারী, পুরুষসহ শিশুদের সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছে। এ ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান (৩৫) ও গৃহিনী হিরা খাতুনের (২৮) ২য় কন্যা সন্তান তোয়ার (১) সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনতে ‘সমৃদ্ধি যুব ফোরাম’ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তোয়া কন্যা সন্তান হলেও তার প্রস্রাব করার অঙ্গটি যথাযথ এবং স্বাভাবিক ছিল না। সামাজিক কুসংস্কারের ভয়ে তার বাবা-মা কারো সাথে আলোচনাও করতে পারছিলো না। এমন অবস্থায় আব্দুল মান্নান সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটির সভাপতির পরামর্শে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার বলেন, “মেয়েটির শরীরে তৃতীয় লিঙ্গের হরমোন ও প্রস্রাবের পথে একটু সমস্যা আছে, অস্ত্রপাচার করলে শিশুটি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।” পরিবারের দারিদ্র্যতা বিবেচনায় তিনি অস্ত্রপাচার করতে ন্যূনতম ৮০০০ টাকা ব্যয় হবে বলে জানান। পরিবারের অনেকেই মনে করেন, মেয়ের জীবনটা বোধ হয় এবার শেষ হয়ে যাবে।
আব্দুল মান্নান আগে থেকেই সমৃদ্ধি যুব ফোরামের সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। লোকলজ্জার ভয়ে কারো সাথে বলতে না পারলেও অবশেষে সমৃদ্ধি ওয়ার্ড যুব কমিটির সভাপতির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর সমৃদ্ধি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সরেজমিনে গিয়ে তোয়ার রিপোর্টগুলো দেখে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করলে দ্রুত অপারেশনের পরামর্শ দেন।
আব্দুল মান্নানের আর্থিক সংকট দেখে সমৃদ্ধি যুব ফোরাম এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে অপারেশনের ব্যবস্থা করে। সফল অস্ত্রপাচারের ফলে তোয়া এখন সুস্থ এবং অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। তোয়াকে নিয়ে বেশ উল্লসিত হয়ে তার পরিবার বলে, “পারকৃষ্ণপুর যুব ফোরামের কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।” আগামীর বাংলাদেশের অন্যসব শিশুর মতো তোয়া এখন বেড়ে উঠবে-বড় হবে এটাই সমৃদ্ধি যুব ফোরামের সদস্যদের প্রত্যাশা।