চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মিনাজপুর গ্রামে স্বামী ও ২ সন্তান নিয়ে বসবাস করেন জোসনা খাতুন। বছর তিনেক আগেও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় দিন কাটতো জোসনা আর তার স্বামী আক্তারুজ্জামানের। ১০ কাঠার মতো নিজস্ব জমিতে কৃষি কাজ ও মাঝে মাঝে অন্যের বাড়িতে কামলা (দিনমজুর) দিয়ে কোনমতে সংসার চলছিল। ভবিষ্যতের কথা মনে হলেই কপালে ফুটে উঠতো অসহায়ত্বের ছাপ। জোসনা প্রায়ই তার কিছু প্রতিবেশীকে নিজ পাড়ায় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমিতিতে যেতে দেখতেন।
একদিন তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাঠ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন, সমিতি থেকে কৃষিকাজের জন্যও ঋণ প্রদান করা হয়। বিষয়টি জেনে জোসনার মনে আগ্রহ জন্মায় এবং স্বামীর সাথে আলোচনা করে ঋণ নিয়ে পেয়ারার আবাদ (চাষ) করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জোসনা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ১০২ বাঁকা শাখার মেঘনা মহিলা সমিতির সদস্য হন। ১৬ নভেম্বর ২০১৯ সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এক বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ শুরু করেন। এক বছরের মধ্যে জোসনা ১ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন। ১ম দফার ঋণ পরিশোধের পর জোসনা লাভের টাকার সাথে পুনরায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন হতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিন বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেন। পরের বছর ৪ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন।
এভাবে ধীরে ধীরে জোসনা খাতুনের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। বাড়তি আয়ের জন্য জোসনা পেয়ারা চাষের পাশাপাশি গরু লালন-পালন শুরু করেন। এখন তার ২টি গরু ও ২টি ছাগল রয়েছে। পেয়ারা ও গরু বিক্রি করে জোসনার যে পুঁজি হয়েছে, তা দিয়ে স্বামীকে একটা দোকান করে দিয়েছেন। স্বামী আক্তারুজ্জামান দোকানে মুদি সামগ্রী এবং কিটনাশক ঔষধ বিক্রি করেন। দোকান থেকে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় হয়। জোসনার এখন একতলা ছাদের নিজস্ব বাড়ি হয়েছে। বর্তমানে জোসনা ১০ বিঘা জমিতে পেয়ারাসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করছেন।
জোসনার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মিনাজপুর গ্রামের আরো অনেকেই পেয়ারার আবাদ করছেন। সামান্য গৃহবধূ থেকে তার এই সংগ্রাম ও অর্জন জোসনার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। জোসনা এবং আক্তারুজ্জামান দম্পতি অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলেন, “আমাদের এই সাহসী সাফল্যের সিংহভাগই হয়েছে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জন্য। সংস্থা পাশে না থাকলে এই সুদিন আমরা দেখতে পেতাম না।”