নারীদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার মধ্যে জরায়ু ক্যান্সার অন্যতম। সাধারণত বিবাহিত এবং ৩০ বছরের বেশি বয়সীরা এ রোগে আক্রান্ত হন। তবে আশার কথা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং সঠিক সময়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব। এ প্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের সাথে সংস্থার যৌথ উদ্যোগে অক্টোবর ২০২১ মাসব্যাপী দরিদ্র নারীদের জরায়ু মুখে ক্যান্সার নির্ণয়ে ভায়া (Visual Inspection with Acetic Acid-VIA)পরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা প্রদান কর্মসূচি পরিচালিত হয়।
পরীক্ষাটি পরিচালনার জন্য সমৃদ্ধি কর্মসূচিভু‚ক্ত ৬টি ইউনিয়নে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে ১৮২৫ জন নারীর নাম নিবন্ধন করা হয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন ভিত্তিক নির্ধারিত তারিখে মোট ১৫২৫ জন নারীর ভায়া পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ভায়া টেস্ট বা ভায়া পরীক্ষা জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের একটি অতি সাধারণ পদ্ধতি। এই পরীক্ষাটি দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ, সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্র, নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ তৃণমূলের সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে বিনামূল্যে করা হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়া, কম বয়সে বিয়ে হওয়াসহ নানা দিক বিবেচনায়, বিবাহিত নারীদের ৩০ বছরের পর থেকে এ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই বছরে অন্তত একবার ভায়া টেস্ট করানো উচিত। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ছয় হাজার নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ রোগ নিরাময়যোগ্য।
ভায়া পরীক্ষায় জরায়ু মুখে এসিটিক এসিড প্রয়োগ করে লক্ষ করা হয়, এ স্থানের স্বাভাবিক বর্ণের কোনো পরিবর্তন হয় কিনা। যদি জরায়ু মুখটি সুস্থ থাকে তবে স্বাভাবিক বর্ণ অপরিবর্তিত থাকে। আর যদি ক্যান্সারের উপস্থিতি থাকে তবে স্বাভাবিক বর্ণটি সাদা রঙ ধারণ করে। এক্ষেত্রে ক্যান্সারের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য বায়োপসি টেস্ট করে পরবর্তী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রোগ নির্ণয়ের পর যথাসময়ে চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রায় ৮০ থেকে ৯৫ ভাগ নারীই সুস্থ হয়ে যান।
উল্লেখ্য যে, সংস্থার উদ্যোগে পরিচালিত এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী ১৫২৫ জন নারীর মধ্যে ১৯ জনের শরীরে পজিটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব বায়োপসি টেস্ট করে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ প্রদান করা হয়। আশা করা যায়, দ্রæত চিকিৎসা নিয়ে সকলেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অংশগ্রহণকারী নারী ও তাদের পরিবারসহ বিভিন্ন মহল সংস্থার এই মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানান।