সৌরচালিত সেচ প্রকল্প কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য একটি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সমাধান। ওয়েভ ফাউন্ডেশন নবায়নযোগ্য শক্তি কর্মসূচির আওতায় মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় সৌর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকার কৃষকদের সাশ্রয়ীমূল্যে সেচ সুবিধা প্রদান করছে। সংস্থার উদ্যোগে এবং ইডকল-এর সহায়তায় এ পর্যন্ত ৮৩টি সেচ প্রকল্প স্থাপিত হয়েছে, যেখানে প্রত্যেকটি প্রকল্পের আওতায় ১৫০-১৬০ বিঘা জমি বছরব্যাপী সেচ সুবিধা পাচ্ছে।
যা এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। স্থানীয় কৃষকদের চাহিদা ও মাঠের অবস্থান বিবেচনায় ২০১৯ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা কেশবপুর মাঠে একটি সৌর সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়। পাম্প স্থাপনের পূর্বে ২৭টি ডিজেলচালিত স্যালো মেশিন ছিল মাঠের সেচ ব্যবস্থার একমাত্র ভরসা। কয়েকজন কৃষকের ভাষ্যমতে, `টাকার অভাবে মেশিন মালিককে ডিজেল কিনে দিতে না পারা ও সময়মত ফসলে সেচ দিতে না পারার কারণে অনেক সময়ই জমির ফসল নষ্ট হতো এবং ফলন কম হতো। মেশিন মালিকদের নিকট তারা জিম্মি ছিল। সেচ ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে আউশ মৌসুমে মাত্র ২৫-৩০ বিঘা এবং বোরো মৌসুমে হতো মাত্র ১০-১২ বিঘা ধান। বেশিরভাগ জমিতে ভুট্টা চাষ হতো। ছিল পেঁপে বাগান আর অল্প কিছু জমিতে হতো সবজি চাষ।
‘সৌর সেচ পাম্প স্থাপিত হওয়ার পর মাঠে সেই চিত্র দ্রæত বদলাতে থাকে। এখন মাঠে পানির সমস্যা নেই, সারা বছর সকল জমি চাষের আওতায় থাকে এবং কোনো জমি পতিতও থাকে না। এছাড়া সাশ্রয়ী সেচ ব্যবস্থার ফলে পূর্বের তুলনায় মাঠে ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে বোরো মৌসুমে মোট কভারেজ ছিল ১০৩ বিঘা (বোরো ধান মাত্র ১২বিঘা), সেখানে ২০২১ সালে সেচের আওতায় এসেছে মোট ১৪৮ বিঘা (বোরো ধান ৩৫ বিঘা, ভুট্টা ৭৫ বিঘা এবং ৩৫ বিঘা টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হয়েছে)। অপরদিকে ২০২০ সালে আউশ মৌসুমে কভারেজ ছিল মাত্র ৭১ বিঘা, যেখানে ২০২১ সালে মোট কভারেজ ৮৬ বিঘা (পূর্বে যেখানে আউশ ধান হতো মাত্র ২৫-৩০ বিঘা, সেখানে বর্তমানে ধান চাষ হচ্ছে ৭০-৭৫ বিঘা)। এখন মাঠে কোনো মৌসুমেই কারও জমি অনাবাদী থাকে না। এ চিত্রের পরিবর্তন হয়েছে শুধুমাত্র সাশ্রয়ী সেচ সুবিধা ও সোলার ইরিগেশন পাম্প স্থাপনের জন্য। কৃষকদের জমিতে সেচ দেওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না, সেচের প্রয়োজনে মাঠেও যেতে হয় না। এছাড়া এ প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ পাইপের সাহায্যে পানি সরবরাহ লাইন থাকায় মাটির উপরিভাগে নালা তৈরি বাবদ জমির অপচয় হয় না এবং কৃষকদের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।
পূর্বে স্যালো মেশিন ছিল এমন একজন কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার নিজের স্যালো মেশিন ছিল, তা এখন তুলে নিয়েছি। জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য আমাকে এখন মাঠে আসতে হয় না, কোনো চিন্তাও নেই। এটা আমার জন্য অনেক কিছু।’
আরেকজন কৃষক আরিফ হোসেন বলেন, ‘আগে কৃষকরা মাঠের বেশিরভাগ জমিতে পেঁপে বাগান ও পাট আবাদ করতো, বর্ষা মৌসুমে কিছু আউশ ধান আর শীতকালে সবজি আবাদ করতো। কিন্তু এখন সোলারের পানিতে সারা বছর মাঠে চাষ হচ্ছে। আগে যেখানে ভাল ফসল হতো না, সেখানে এখন ধান চাষ হচ্ছে। এখন সারা মাঠ সবুজ আর সবুজ।’