অসহায় সুলতানের সহায় গ্রাম আদালত
৬০ বছর বয়সী দরিদ্র সুলতানের আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল ইজিবাইক। খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার ১নং আটরাগিলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের গিলাতলা গ্রামের বাসিন্দা মো: সুলতান হাওলাদার। স্ত্রী ও ৫ ছেলে-মেয়েসহ বেশ বড় সংসার তার। একই গ্রামের মো: আবুল হোসেন, সুলতানের ইজিবাইক নিয়মিত ভাড়া নিয়ে চালাতেন। একদিন আবুল হোসেনের কাছ থেকে ইজিবাইকটি চুরি হয়ে যায় এবং বিষয়টি সে ইজিবাইকের মালিক তথা সুলতান হাওলাদারকে জানান।
রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা সুলতান চুরি যাওয়া ইজিবাইকের ক্ষতিপূরণ বাবদ আবুল হোসেনের কাছে নগদ ৭৫হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু আবুল হোসেন ‘আজ না কাল’বলে ঘুরাতে থাকেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে সুলতান ক্ষতিপূরণের টাকা চাইতে গেলে আবুল হোসেন তার সঙ্গে খারাপ আচরণ ও গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়েদেন। এ আচরণে মনোক্ষুন্ন হয়ে বিষয়টি সমাধানের আশায় প্রতিবেশীদের শরণাপন্ন হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি সুলতানের।একদিন গ্রাম আদালত প্রকল্পের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সুলতান অল্প খরচে তার বিচারিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। পরবর্তীতে প্রকল্পের গ্রাম আদালত সহকারী শেখ আরজু হোসেনের পরামর্শ অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে এসে সুলতান হাওলাদার ইজিবাইকের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৫ হাজার টাকা দাবি করে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রাম আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেন।
মামলাটি গ্রহণের পর ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম আদালতের বিধান মোতাবেক নির্ধারিত দিন ধার্য করে মামলার প্রতিবাদী আবুল হোসেনের প্রতি সমন জারি করেন এবং আবেদনকারীকে তা অবহিত করেন। নির্ধারিত দিনে উভয় পক্ষ হাজির হলেও প্রতিবাদী আবেদনকারীর দাবি স্বীকার না করায় গ্রাম আদালত গঠনের লক্ষ্যে উভয় পক্ষকে সদস্য মনোনয়ন নির্দেশনামা প্রদান করা হয়।ফলশ্রুতিতে উভয়পক্ষ কর্তৃক মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। ২০ অক্টোবর গ্রাম আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে মামলাটি নিজেদের মধ্যে আপোষ তথা প্রাক বিচারে নিস্পত্তির প্রস্তাব দিলে তারা সম্মত হন। এরপর উভয় পক্ষ নিজেদের মধ্যে আপোষে নিষ্পত্তি করে আপোষনামা আদালতে দাখিল করেন। আপোষনামার শর্ত মোতাবেক গ্রাম আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করে যে, প্রতিবাদী আবুল হোসেন ২৭ অক্টোবরের মধ্যে ইউপি মারফত আবেদনকারীকে ইজিবাইকের ক্ষতিপূরণবাবদ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করবেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবাদী আবুল হোসেন গত ২৫ অক্টোবর ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আবেদনকারীকে ইজিবাইকের ক্ষতিপূরণ বাবদ উল্লিখিত পরিমাণ টাকা প্রদান করেন।
আবেগাপ্লুত হয়ে আবেদনকারী সুলতান হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ, আমাদের বিচারও যে গ্রামআদালতে সহজে এবং অল্প সময়ে নিষ্পত্তি হয়ে যায় তার প্রমাণ পেয়ে আমি খুবই খুশি। আমি এ টাকা দিয়ে ১ বিঘা জমিলিজ নিয়েছি এবং এ রায়ে খুবই সন্তুষ্ট।’ প্রতিবাদী মো. আবুল হোসেনও বিচারে খুশি হয়ে বলেন, ‘‘মামলা পরিচালনায় আমাকে কোন প্রকার চাপ দেওয়া হয়নি এবং বিচারটি নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়েছে।” উভয় পক্ষের মধ্যে এখন কোন বিরোধ নেই, তারা একে অপরের সাথে মিলেমিশে বসবাস করছেন।
গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘ছোট–খাটো বিরোধ গ্রাম আদালতের মাধ্যমে আইনসম্মত ভাবে নিষ্পত্তি হওয়ায় সাধারণ মানুষ কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই হাতের কাছে সুবিচার পাচ্ছে; যা ইউনিয়ন পরিষদের মর্যাদা বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভুমিকা রাখছে।’’