আত্মকর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখতে পারে উন্নতজাতের ভেড়া পালন
আমাদের দেশে গরু, মহিষ ও ছাগলের মতোই পারিবারিক পর্যায়ে আদিকাল থেকে ভেড়া পালন হয়ে আসছে। কৃষি অর্থনীতিতে ভেড়ার বিরাট অবদান রয়েছে। ভেড়া থেকে মাংস, পশম ও জৈব সার পাওয়া যায়। ভেড়ার একটি উন্নত জাত হচ্ছে গাড়ল। দেখতে আমাদের দেশী ভেড়ার মত এবং আকারে কিছুটা বড়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোটনাগপুরি জাতের ভেড়ার সাথে আমাদের দেশী ভেড়ার ক্রস ব্রীড হলো গাড়ল। রাজশাহী অঞ্চলের খামারিরা প্রথম এই সংকরায়ন ঘটালেও মেহেরপুর অঞ্চলে এর ব্যাপকতা দেখা যায়। দেশী ভেড়া আর গাড়ল পালন পদ্ধতি প্রায় একই ধরনের। এগুলো গ্রামীণ পরিবেশে অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনায় সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, নোনা পানির অঞ্চলে সহজে মানিয়ে নিতে পারে এবং খুব শক্ত প্রকৃতির। দেশী ভেড়ার মতই এরা দল বেঁধে চড়ে বেড়ায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশী এবং বাচ্চার মৃত্যু হার একদম কম। দেশী ভেড়ার তুলনায় গাড়লের পশম উৎপাদন হয় বেশী। গাড়লের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। গরু-ছাগলের মাংসে যেসকল ক্ষতিকর দিক রয়েছে গাড়লের মাংস সেগুলো থেকে মুক্ত। চিরাচরিত পদ্ধতির পরিবর্তে মাচা পদ্ধতিতে পালন, গরু-ছাগল থেকে পৃথক আবাসন ব্যবস্থা, নিয়মিত কৃমিনাশক, চিকিৎসা ও টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করলে গাড়ল উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব। যা অনেক মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ২০১৫ সাল থেকে পিকেএসএফ-এর সহায়তায় মেহেরপুর জেলাসদর ও গাংনী উপজেলায় এবং উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় উন্নতজাতের ভেড়া পালন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অধীনে এ পর্যন্ত দুই জেলার ৩ উপজেলায় মোট ৯৯০জন খামারিকে মাচা পদ্ধতিতে উন্নতজাতের ভেড়া পালনের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করাহয়েছে। পাশাপাশি আদর্শ খামার স্থাপনে কারিগরি সহায়তা, উচ্চ ফলনশীল ঘাস চাষে সহায়তা, কৃমিনাশক ও টিকা প্রদান এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও খামারিদের প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয় ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে সংস্থা পর্যায়ে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় ১০০টি ভেড়া ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১টি এবং পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় ৬০টিধারণক্ষমতা সম্পন্ন ১টি মোট ২টি ব্রিডিং খামার স্থাপন ক রা হয়েছে। এখান থেকে আগ্রহী খামারিদের মাঝে দেশী উন্নত জাতের মা ভেড়া (গাড়ল) ও খাসী ভেড়া সরবরাহ করা হয়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে কর্মএলাকায় দেশী উন্নতজাতের ভেড়া (গাড়ল) পালন ব্যাপক সাড়া পেয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছোট ও মাঝারী ধরনের খামারি গড়ে উঠেছে। অনেক ভূমিহীন, প্রান্তিক চাষী, বেকার যুবক ও দুস্থ নারী দেশী উন্নতজাতের ভেড়া (গাড়ল) পালনকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন, যা এলাকার দারিদ্র্য দূরীকরণেও ভূমিকা রাখছে।