ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর নতুন উদ্যোগ ‘কৃষিমোর্চা’
স্বাধীনতার পর আমাদের দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর ছিল। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে শিল্পখাত, সেবা খাত এবং কিছু উপখাত কম বেশি অগ্রসর হচ্ছে। বৃহত্তর কৃষি খাত যথা-কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। এছাড়াও কৃষি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য গর্ব করার মতো। কৃষি খাতে এত সাফল্যের পরেও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা রয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে কৃষি খাতে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ বান্ধব বীজ এবং প্রাণি ও মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রে অধিক উৎপাদনশীল ও পরিবেশবান্ধব প্রজাতির ঘাটতি, সার ও কীটনাশকে ভেজাল, সেচ ব্যবস্থার ঘাটতি কৃষি কাজে সংশ্লিষ্টদের দক্ষতার ঘাটতি, উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণের সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঘাটতি, কৃষি খাতের পণ্যসমূহের মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে ঘাটতি, পর্যায়ক্রমে কৃষি জমি কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি। সর্বোপরি কৃষকের শ্রম ও ঘামে উৎপাদিত পণ্য সমূহের বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি সবচেয়ে বড় সমস্যা। এছাড়াও কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য ঋণের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতির অন্যতম প্রধান কারণ কৃষক–কৃষাণী ও খামারীরা কৃষি খাতের সকল দিক এবং শ্রমিক শ্রেণীও অন্যান্য পেশাজীবীদের মত তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয় । এ প্রেক্ষাপটে, ওয়েভ ফাউন্ডেশন ‘বৃহত্তর কৃষিখাত যথা-কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সকল কার্যক্রম পরিকল্পিতভাবে বহুমুখীকরণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষুদ্র কৃষি–একটি টেকসই ব্যবসায় উন্নীত করা’র লক্ষ্য নির্ধারণ করে। বিগত জুলাই ২০১৯ থেকে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলায় কৃষক-কৃষাণীদরে সংগঠিত করে ‘কৃষির্মোচা’ গঠনের কাজ শুরু হয়। ২০-২৫ সদস্যবিশিষ্ট ৫টি ‘কৃষির্মোচা’ গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের মধ্য দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু করে। সংস্থার পক্ষ থেকে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উচ্চফলনশীল বীজ, প্রশিক্ষণ, মাঠ পর্যায়ে কারিগরি সহায়তা এবং ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রথম পর্যায়ে উৎপাদন ও বিক্রয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ধারণার থেকে বেশী লাভবান হয়েছে যা সংস্থার এই নতুন উদ্যোগের সাফল্যের দিক। পাশাপাশি কৃষকরা তাদের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট এর মাধ্যমে সঞ্চয় করছে, প্রতি মাসে র্মোচার সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকদেরও সংগঠিত করছে। এ বছর চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মানকিগঞ্জ জেলায় নতুন করে কৃষি ও প্রাণীসম্পদ ক্ষেত্রে ‘কৃষির্মোচা’ সংগঠিত হয়েছে এবং আরো হচ্ছে। এছাড়াও সংস্থার পক্ষ থেকে কৃষকদের অধিকারসহ বৃহত্তর কৃষি খাতের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তুতি চলছে। আমরা আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে কৃষি খাতে নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান, কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তিসহ ‘কৃষক ও খামারীদের অধিকার’ প্রতিষ্ঠায় ‘কৃষির্মোচা’ সোচ্চার হবে। পাশাপাশি কৃষি খাতে এই উদ্যোগ কৃষক–কৃষাণী এবং খামারী সহসংশ্লিষ্টদের আর্থ-সামাজিক এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে বলে আমাদের বিশ্বাস।