যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার অন্তর্গত রামপুর পল্লী গ্রামে আঞ্জুয়ারা বেগম এবং তার স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলামের বসবাস। মোঃ তরিকুল ইসলামের বাবার তেমন কোন জমি-জায়গা ছিল না। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কথা চিন্তা করে আঞ্জুয়ারা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তরিকুল ইসলাম। দুঃখ কষ্টের সংসারে তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম হয় এক কন্যা সন্তানের। সন্তানের দুধ ক্রয়সহ অন্যান্য খরচ বাড়ায় বেশ কষ্টে চলে তাদের সাংসারিক জীবন।
এ অবস্থায় আঞ্জুয়ারা বেগম স্বামীর সাথে পরামর্শ করে গরুর ফার্ম করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এতে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মূলধন। অনেক আত্মীয়-স্বজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সাড়া পান না। এমন সময় এক প্রতিবেশী ওয়েভ ফাউন্ডেশন রাজগঞ্জ ইউনিটের আওতায় মালা মহিলা সমিতির সন্ধান দেন। আঞ্জুয়ারা তার স্বামীকে সাথে নিয়ে মালা মহিলা সমিতিতে ভর্তি হন এবং এপ্রিল, ২০১৮ এ ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণের টাকার সাথে জমানো কিছু টাকা দিয়ে ২টি ছোট বাছুর গরু ক্রয় করেন এবং কিছু পোল্ট্রি মুরগীর বাচ্চা কিনে ব্যবসা শুরু করেন। পোল্ট্রি ব্যবসায় তাদের বেশ লাভ হয়, ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হতে থাকে। এ দিকে ছোট বাছুর গরু দুটিও বড় হতে থাকে।
পরবর্তীতে মার্চ, ২০২১ এ আঞ্জুয়ারা পুনরায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন হতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৫টি গাভী গরু ক্রয় করে খামার করেন। একবছর ঘুরতে না ঘুরতেই ৫টি গাভীর ৫টি বাছুরসহ মোট ১০টি গরু হয়। ৫টি গাভী হতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ এ পুনরায় ২ লক্ষ টাকা ঋণ এবং ব্যবসার লাভের টাকা দিয়ে ৪টি গাভী গরু ক্রয় করেন। দুধ বিক্রয় ও গরু বিক্রয় থেকে তাদের মাসে গড়ে ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। তাদের খামারে এখন ১৪টি গরু আছে যার আনুমানিক মূল্য ১২ লক্ষ টাকা। এভাবে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে গাভী পালনসহ আঞ্জুয়ারার গরুর খামরটি বড় হতে থাকে।
যে আঞ্জুয়ারা বেগম এবং তার স্বামীর গ্রামে গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, অবহেলিতভাবে বসবাস করতেন, তারা এখন এলাকার গণ্যমান্য মানুষ। অনেক মানুষ তাদের ফার্ম দেখতে এবং পরামর্শ নিতে আসেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে দারিদ্র্যকে জয় করে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য আঞ্জুয়ারা-তরিকুল দম্পতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাদের স্বপ্ন গরুর খামারটি আরও বড় হবে, যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।