সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিকভাবে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর মধ্যে বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বিশেষভাবে দুর্যোগপ্রবণ। বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত আগুনমুখা, তেতুলিয়া, পায়রা, বলেশ্বর ও মেঘনা নদী বরিশাল জেলায় জালের মতো বিস্তৃত হওয়ায় এই অঞ্চলের কিছু ইউনিয়ন মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। বিশেষ করে বাকেরগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এসব এলাকায় কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় সামান্য জোয়ারেই প্লাবিত হয়, আর অতি জোয়ার হলে নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য।
নারীরা অনেক সময় তাদের সম্পদ ও সন্তানদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘর ছাড়তে অনীহা দেখায়, যা তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ‘এসিটি’ প্রকল্পের মাধ্যমে বাকেরগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে এসিটি প্রকল্পের আওতায় চারটি ব্যাচে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়, যেখানে ৮০ জন নারী ও ৪২ জন পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণে দুর্যোগ পূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়, বিশেষ করে দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রশিক্ষণের একজন অংশগ্রহণকারী, ভরপাশা ইউনিয়নের মুসলিম পাড়ার লাইলি বেগম বলেন, “এরকম প্রশিক্ষণ আগে কখনো পাইনি। এখন সংকেত পেলেই আমি বুঝতে পারব কখন ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে। তাছাড়া খাবার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাও বুঝেছি, না হলে দুর্যোগের পর কষ্ট পেতে হবে।”
অন্য আরেক প্রশিক্ষণার্থী রহিমা বেগম বলেন, “ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ আমাদের নদীর পাড়ে বসবাসরত সকল নারীর জানা উচিত। এখন আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, দুর্যোগ আসলে কীভাবে আমার পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করব।”