শারমিন আক্তার, চুয়াডাঙ্গা জেলার তেইপুর গ্রামের নিম্নবিত্ত এক পরিবারের গৃহবধূ। অভাবের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতার উদ্দেশ্যে ক্ষুদ্র খামারী হিসেবে শুরু করেন গরু পালন। কিন্তু বিধি বাম! ২০২৩ সালে গলায় ফাঁস লেগে একটি গরু মারা যায়। স্বচ্ছলতার পরিবর্তে প্রায় এক লক্ষ টাকা লোকসান করে বসেন শারমিন। তার মতো একজন ক্ষুদ্র খামারীর জন্যে এই ঘটনা ছিল বিশাল বিপর্যয়ের।
পরবর্তীতে গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেন তিনি। সমসাময়িক সময়ে তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাস্তবায়িত আরএমটিপি প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পারেন। এই প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র খামারীদের উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় জানতে পেরে তিনি প্রকল্প অফিসে যোগাযোগ করেন। শারমিনের মর্মান্তিক গল্প শুনে, সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রকল্পের লোকজন অনুধাবন করেন, শারমিনের ইতোমধ্যেই গবাদিপশু পালনের হাতেখড়ি হয়েছে এবং সঠিক পরামর্শ ও সহায়তার মাধ্যমে একজন স্বাবলম্বী নারী খামারী হিসেবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প অফিস থেকে তাই তাকে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরএমটিপি তাকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় এবং পশুপালনের উপর একদিনের একটি উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এই প্রশিক্ষণ থেকেই শারমিন ‘কাউ কমফোর্ট জোন’ (Cow Comfort Zone) সম্পর্কে জানতে পারেন। কাউ কমফোর্ট জোন হলো পশুপালনের একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট সীমানার ভেতর খোলা পরিবেশে গৃহপালিত পশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ দেওয়া হয়। এ ব্যবস্থায় গবাদি পশু মুক্তভাবে বিচরণ করে, প্রয়োজনমতো খাবার গ্রহণ করে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে বেড়ে ওঠে। সনাতন পদ্ধতির তুলনায়, যেখানে পশুকে গলায় দড়ি বেঁধে খামারির ইচ্ছামতো খাবার খাওয়ানো হতো, কাউ কমফোর্ট জোন পশুদের জন্য অনেক বেশি আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। এ পদ্ধতি গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি কমিয়ে আনে, প্রজনন ক্ষমতা বাড়ায় এবং মাংস ও দুধ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটায়।
প্রশিক্ষণ শেষে শারমিন তার সাত শতাংশ জমিতে কাউ কমফোর্ট জোন গড়ে তোলেন। প্রকল্প থেকে বেড়া বানানোর জন্য মোট খরচের প্রায় ২৫% অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। নতুন এই পদ্ধতিতে পশু পালন শুরু করার পর হতে ক্রমান্বয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। তিনি জানান, “এ নতুন পদ্ধতিতে খামার শুরু করার পর থাইক্কা গরুর রোগবালাই কমছে, আগের থাইক্কা স্বাস্থ্য ভালা হইছে আর দুধ উৎপাদনও বাড়ছে।” বছর ঘুরতেই তার খামারে বাছুর-ষাড়-গাভী’র সংখ্যা এখন ২৮টি। পাশাপাশি পূর্বের তুলনায় তার প্রায় ৫০% আয় বৃদ্ধি পেয়েছে গরুর দুধ বিক্রির মাধ্যমে। নিজ কমিউনিটিতে শারমিনের দেখাদেখি আরও অনেকেই এই পদ্ধতিতে পশুপালনে আগ্রহী হচ্ছেন।