সুলতান মিয়া (৬৫) পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল লোহালিয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি একজন শারীরিক এবং বাক-প্রতিবন্ধী, অভাব-অনটন যেন তার নিত্যসঙ্গী। দুই মেয়েসহ স্বামী-স্ত্রী চারজনের সংসারের খরচ বহনের জন্য গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করতেন সুলতান মিয়া। ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে নেওয়ায় সবসময়ই হীনমন্যতায় ভুগতেন। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হলেও নিজের অসহায়ত্বের কাছে আত্মসমর্পন ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
কিন্তু দমে যাননি সুলতান মিয়া। গরু-ছাগলের পাশাপাশি শুরু করেন হাঁস-মুরগি লালন-পালন। এছাড়াও সবজি বাগানের কাজ করছেন। পারিবারিক পুষ্টি-চাহিদা মিটিয়েও বাড়তি কিছু আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে সুলতান মিয়ার। তিনবছর আগেও তাদের এমন অবস্থা ছিলো না। ২০২০ সালে ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘পাথওয়েজ টু প্রসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল-পিপিইপিপি’ প্রকল্পের অধীন অতিদরিদ্র প্রতিবন্ধী পরিবার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে তার। পিপিইপিপি প্রকল্পটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে এবং পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
প্রকল্পে অন্তর্ভুক্তির পর সংস্থার উদ্যোগে কমিউনিটি মোবিলাইজেশনের আওতায় সুলতান মিয়াকে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেয়া হয়। সেখান থেকে তিনি প্রতি মাসে ভাতা পেতে শুরু করেন। এছাড়া ২০২১ সালে তার স্ত্রী রেনু বেগম প্রকল্পের লোহালিয়া গ্রামের পিভিসি সদস্য হন। এরপর তিনি সংস্থা হতে ঋণ নিয়ে তার স্বামী সুলতান মিয়াকে মুদি দোকান করার জন্য মূলধনের ব্যবস্থা করে দেন। পাশাপাশি ২০২২ সালে প্রকল্প থেকে পাঠা পালন/বাক সার্ভিস সেন্টার করার জন্য তার পরিবারকে ২টা ছাগল কিনে দেয়া হয়। বর্তমানে পাঠা পালন করে সুলতানের পরিবার প্রতি মাসে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করছে।
সুলতান মিয়া এখন আর ভিক্ষা করেন না বরং মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখেন। তিনি বলেন, “মুই এহন আর ভিক্ষা করি না, নিজের উপার্জনের টাহায় সংসার চালাই। মোগো সাহায্য করবার জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশনকে অনেক ধন্যবাদ”।