বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারব্যবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ, আর্থিক সীমাবদ্ধতা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার অভাব ও দুর্নীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং লিঙ্গ ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সীমিত সুযোগকে সীমাবদ্ধতা হিসেবে চিহ্নিত করে সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশস্থ সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের সহায়তায়, ইউএনডিপির সাথে যৌথভাবে ৫টি বিভাগীয় সংলাপ আয়োজন করেছে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম। ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক এই সংলাপগুলো যথাক্রমে খুলনা (২৯ জানুয়ারি), বরিশাল (২ ফেব্রুয়ারি), রাজশাহী (৫ ফেব্রুয়ারি), সিলেট (১০ ফেব্রুয়ারি) ও চট্টগ্রামে (১৩ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ সংলাপগুলোতে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও দায়িত্ব বিভাজন, নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন, কর-রাজস্ব ব্যবস্থার স্থানীয়করণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় উন্নয়নের সকল স্তরে জনঅংশগ্রহণ ও তৃণমূল মানুষের অন্তর্ভুক্তি, এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি-এ ছয়টি সংস্কার প্রস্তাবের অধীনে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের পক্ষ থেকে প্রায় ২০টি সুপারিশ অংশগ্রহণকারীদের মতামত প্রদানের জন্য সংলাপগুলোতে উত্থাপন করা হয়।
ফোরামের সংস্কার প্রস্তাবের বেশিরভাগ সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্রত্যেক সরকারি সেবা দপ্তরকে স্থানীয় সরকারের অধীনে নিয়ে আসা; স্থানীয় সরকারে এমপিদের নিয়ন্ত্রণ ও আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ দূর করা; জেলা পরিষদের অধীনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে নিয়ে আসা; আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, আয়তন, জনসংখ্যা ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বরাদ্দ প্রদান করা; নারী জনপ্রতিনিধিদের সুনির্দিষ্ট কাজ দেয়া; সরাসরি এবং দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচনের ব্যবস্থা করা; স্থানীয় সরকার কার্যক্রমে যুব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা; কর-বৈষম্য দূর করা; জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার শুরুতেই যথাযথভাবে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করা; বর্তমান বাজারমূল্য বিবেচনায় জনপ্রতিনিধিদের সম্মানীর পরিমাণ বৃদ্ধি করা; ইউনিয়ন পরিষদে জনবল বৃদ্ধি করা; বিভিন্ন কমিটিতে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি।
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় সংলাপগুলোতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহ-পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়। আয়োজনে সহায়তা করে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সংস্থাগুলো। এছাড়া ফোরাম সচিবালয় তথা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের পক্ষে নজরুল ইসলাম, লিপি আমেনা ও পাপেল কুমার সাহার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এ সংলাপগুলোতে বর্তমান ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, নারী, পেশাজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, উন্নয়নকর্মী, সমাজকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, যুব প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধি, গৃহবধূ, এনজিও সংগঠিত দলের নেত্রী, শিক্ষক, স্থানীয় ক্লাবের প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, আদিবাসী, দলিত, হিজড়া সম্প্রদায়, অতিদরিদ্রসহ অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। প্রায় চার শতাধিক অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৭৭ জন জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-প্রতিবন্ধিতা-সম্প্রদায়গতভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও এসব সংলাপে উপস্থিত থেকে তাদের মতামত প্রদান করেছেন।