ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও এর যুব প্ল্যাটফর্ম ইয়ুথ এসেম্বলি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ‘সবুজ জীবনধারা’ (Green Lifestyle) ত্বরান্বিত করতে একটি কর্মসূচি ও আন্দোলন বাস্তবায়ন করছে, যার নাম ‘গো গ্রিন’। গো গ্রিন কর্মসূচির অন্যতম একটি প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘পরিবেশসম্মত কৃষি ও নিরাপদ খাদ্য’। যদিও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে অনেকাংশেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, তবুও অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করে তুলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় ‘গো গ্রিন সেন্টার’-এর পথচলা, যার মাধ্যমে পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
১৯৯৩ সাল থেকে দেশের বৃহত্তর কৃষি খাতের অধীনে বিভিন্ন জেলায় ফসল, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য খাতে ওয়েভ ফাউন্ডেশন বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সংস্থার উদ্যোগে ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার কোষাঘাটা এলাকায় ১০ একর জমিতে ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ক্যাপাসিটি’ (CDC) নামে একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে এটিকে ২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ‘গো গ্রিন সেন্টার’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। সেন্টারটির চলমান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সমন্বিত কৃষি ইউনিট (ফসল, প্রাণিসম্পদ এবং মৎস্যসম্পদ), ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রজনন খামার, মাছের খামার, দুম্বা প্রজনন খামার, বিভিন্ন সবজি প্রদর্শনী প্লট এবং বীজ সংরক্ষণাগার।
সেন্টারটির অন্যতম আকর্ষণ হলো ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল প্রজনন খামার, যা ২০১০ সালে মাত্র ৩০টি ছাগল দিয়ে শুরু হয় এবং বর্তমানে ২০০টিরও বেশি ছাগল নিয়ে এক বিশাল খামারে পরিণত হয়েছে। কেন্দ্রে উৎপাদিত ছাগলগুলো ‘গোট মার্ট’ এর মাধ্যমে বাজারজাত করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৩০০ পারিবারিক খামারের মাধ্যমে ছাগল উৎপাদনের সুযোগ প্রসারিত হয়েছে। এছাড়াও ২০১৮ সালে দুম্বা প্রজনন প্রকল্প চালু হয়, যা স্থানীয় পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখানকার মৎস্য খামারে আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে কার্প মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং লাভজনক মাছ চাষের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সবজির প্রদর্শনী প্লটে নিরাপদ ও রাসায়নিকমুক্ত চাষের পদ্ধতি প্রদর্শন করা হয়, যা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সেন্টারের অত্যাধুনিক বীজ সংরক্ষণাগারের মাধ্যমে সারা বছর উচ্চমানের পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে, যা দেশের কৃষি খাতে বিশেষ অবদান রাখছে।
পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গো গ্রিন সেন্টার ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, কেন্দ্রটি তরুণ কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী প্লট পরিচালনা এবং মাছ চাষীদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে, যা তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।