গবাদি পশুর জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা দেশব্যাপী একটি চ্যালেঞ্জ। পুষ্টিকর পশুখাদ্যের ঘাটতি প্রায়ই গবাদি পশুর সর্বোত্তম স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতা ব্যাহত করে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন গবাদি পশু লালন-পালনকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করা কৃষক। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে পশুখাদ্যের ঘাটতিজনিত সমস্যার সম্মুখীন ছিলেন। এলাকায় আলাদা কোন পশুখাদ্য বাজার না থাকায় যাতায়াত খরচসহ শহর থেকে চড়া দামে পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থান করতে হতো।

আবার পশুখাদ্য উৎপাদকদের পণ্য বিক্রির সরাসরি কোন সুযোগও ছিল না। কৃষি উন্নয়নে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষকদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিডি বিফ অ্যান্ড গোট ভ্যালু চেইন সিগনেচার প্রোগ্রামের অধীনে একটি পশুখাদ্য বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। হেইফার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের অর্থায়নে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় এই উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের আয়ের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি গবাদি পশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করছে যা এলাকায় পশুখাদ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে একটি উদ্ভাবনী ঘটনা।

স্থানীয় প্রশাসন, কৃষক সমবায় সমিতিসহ এলাকার জনগণের সহযোগিতায় ফেব্রুয়ারি ২০২৪ হতে শুরু হয় বাজারের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। প্রায় মাসব্যাপী নির্মাণ কাজ শেষে গত ১৩ মার্চ ২০২৪ বাজারটি উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে অন্য বাজারের সাথে মিল রেখে নিয়মিত পশু খাদ্যের বাজারটিও বসে। স্থানীয় কৃষক ও খামারীদের তাদের পশুখাদ্য পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রি করার জন্য এটি একটি প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। কৃষকরা বাজারে সরাসরি পণ্য বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন, ফলে তাদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে নারী কৃষক যারা পশুখাদ্য চাষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাদের আয়ের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে বাজারটি। কৃষিতে নারীদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে এই বাজার।

মোল্লাপাড়া গ্রামের নারী কৃষক মোছা. মাছুরা বেগম বলেন, “ঘাসের বাজার হওয়ার ফলে নিজের খামারের চাহিদা মিটিয়েও অতিরিক্ত ঘাস ন্যায্য মূল্যে বাজারে বিক্রি করতে পারছি। আয়ও বাড়ছে, পরিবারেও সহযোগিতা করতে পারতেছি।” উন্নত, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও মানসম্পন্ন পশুখাদ্য সরবরাহের ফলে এলাকার খামারীরা গবাদি পশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারছে, যা দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে। যগোপাড়া গ্রামের নারী খামারী শিউলী বেগম বলেন, “যথেষ্ট পরিমাণ আবাদি জমি না থাকার ফলে নিজের গবাদি পশুগুলোকে চাহিদা মোতাবেক ঘাসের যোগান দিতে পারছিলাম না। পশুখাদ্য বাজার স্থাপনের ফলে এখন প্রয়োজন মতো ঘাস কিনতে পারছি। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ঘাসের যোগান দেওয়ার ফলে এখন থেকে খামারের উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং খামারি হিসেবে অধিক লাভবান হবো।”

বাজারের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ওয়েভ ফাউন্ডেশন পশুখাদ্য ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা ও গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের আধুনিক ঘাস চাষের কৌশল, ফসল কাটা এবং ফসলোত্তর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণও প্রদান করছে। সংস্থার এ উদ্যোগ গবাদি পশুর পুষ্টি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষকের আর্থিক উন্নয়নের পাশপাশি গ্রামীণ জনগণের টেকসই উন্নয়নের পথও প্রশস্ত করেছে। আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদাহরণ হতে পারে উদ্ভাবনীমূলক এই উদ্যোগ।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt