চারপাশের পৃথিবী বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিক শক্তি কতটুকু রয়েছে আমাদের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ওয়েভ ফাউন্ডেশনের যুব প্ল্যাটফর্ম ইয়ুথ এসেম্বলি আয়োজন করে এক বিশেষ সেশন—“Embracing Change: An Opportunity for Growth and Finding Space”। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ৯ অক্টোবর ২০২৪ আয়োজিত এই সেশনে অংশগ্রহণ করেন দেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ইয়ুথ এসেম্বলির সদস্য এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ। আয়োজনের শুরুতে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “কিছু অসুখ মনের দৃঢ়তার মাধ্যমেও দূর হতে পারে। আমাদের উচিত একজন উদ্যোক্তার মতো নিজের শক্তি খুঁজে বের করা এবং প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় নিজেদের জন্য রাখা।”
সেশনের শুরু থেকেই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিল জানার আগ্রহ ও কৌতূহল—কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়? এই কৌতূহলের জবাব খুঁজতে সহায়তা করতে সেশনে ফ্যসিলিটেটর হিসেবে ছিলেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সানজিদা ইসলাম। গল্প বলার ছলে সহজ ভঙ্গিতে জটিল সমস্যাগুলোর নিদারুণ সব সমাধান দিতে জানেন তিনি। যার ফলে সেশনটি হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। কীভাবে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, বিষন্নতা দূর করা যায়, কিংবা নারীদের মাসিকের সময় মানসিক পরিবর্তনগুলো সামলানো যায়—এসব বিষয়ে তিনি তথ্যসমৃদ্ধ ও বাস্তবভিত্তিক সমাধান দেন। তার কথায় উঠে আসে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস কিংবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার মতো চ্যালেঞ্জগুলোর কার্যকরভাবে মোকাবিলার উপায়।
শুধুই কি আলোচনা? এক পর্যায়ে ফ্যাসিলিটেটরের নেতৃত্বে একটি মেডিটেশন সেশন হয়। কল্পনা করুন, পরিমিত আলো-আধাঁরের মাঝে, মৃদুমন্দ নির্মল বাতাসে, শান্ত-নিবিড় পরিবেশে দুচোখ বন্ধ করে আপনার ভেতর ঝড় বয়ে চলা সব মুহূর্তগুলো, সংগ্রামগুলো, জীবনের বাঁধাবিপত্তিগুলো, সব ব্যর্থতা-পরাজয়গুলো মনে পড়ছে একে একে। কেমন লাগে তখন? বুক ভারী হয়ে আসে, গলা বুজে যাচ্ছে, মাথার মধ্যে ভীষণ যন্ত্রণা, বন্ধ চোখের কোণে পানি? গভীর করে লম্বা এক শ্বাস ভেতরে নিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ছেন আপনি, সাথে নিজের ভেতরকার সব ঝঞ্ঝাট-জঞ্জাল গুলো ছেড়ে দিচ্ছেন একটু একটু করে। শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিজের ওপর মানসিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার সহজ কিন্তু কার্যকরী এক উপায়। এই উপায়ের সাথেই পরিচিত হোন অংশগ্রহণকারীরা মেডিটেশন সেশনের মাধ্যমে।
“আমাদের জীবনেও ঋতুর মতো পরিবর্তন আসে,” বলছিলেন ফ্যাসিলিটেটর সানজিদা। “এই পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে, তাকে স্বাগত জানানো উচিত। আত্মসচেতনতা দিয়ে শুরু হয় এই যাত্রা।”
সেশনের প্রতিটি অংশ জুড়েই ছিল পরিবর্তনকে আলিঙ্গনের বার্তা। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ‘গো গ্রিন’ প্রোগ্রামের অধীনে আয়োজিত এই সেশন শুধু মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার সীমাতেই আটকে থাকেনি, অশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের জীবনের গভীরতর দিকগুলো নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। যেখানে পরিবর্তন কোনো বাধা নয়, বরং বেড়ে ওঠার নতুন সুযোগ। আর সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের জীবনে ইতিবাচকতা আর মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে।