জেলার সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান এবং জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সেবা প্রদানকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে ‘জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রূপান্তর’ করা এবং বিদ্যমান জেলা পরিষদকে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাসহ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত যুব ও নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জোরালো দাবি জানিয়েছেন গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। গত ২৯ এপ্রিল ২০২৫, রাজধানীর হোটেল বেঙ্গল ব্লুবেরিতে গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম আয়োজিত রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব বলেন। পাশাপাশি, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালার কিছু বিষয়ে ফোরামের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
ফোরামের সদস্য ও এনআরডিএস’র নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়ালের সঞ্চালনায় এতে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূইয়া, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফী রতন; জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা প্রমুখ। এছাড়া প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দও এতে অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের জেলা পরিষদ কার্যকর করাসহ অধিকাংশ সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে যেসব বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে বক্তব্য রাখেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: স্থানীয় সরকারে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে জবাবদিহিতার ব্যবস্থাসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করা, ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় সরকারের পদগুলো যেন বিপজ্জনক না হয় সেদিকে নজর দেওয়া, সাম্যতার ভিত্তিতে নারীদের জন্য স্থানীয় সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা, সংরক্ষিত আসনের মাধ্যমে রূপক অর্থে নারীদের না রেখে কার্যকর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার পরিহার করা, জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা, স্থানীয় পর্যায়ে জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে বার্ষিক পর্যালোচনার ব্যবস্থা করা, যাতে রিকল ব্যবস্থার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিরা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়, বিকেন্দ্রীকরণের উদ্দেশ্যে প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থার আদলে জেলা সরকারকে শক্তিশালী করা, গণতান্ত্রিক চর্চায় পদ্ধতিগত সংস্কারের জন্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে নাকি পরে অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে দু’ধরনের মতামতই পাওয়া গেছে এ আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের দিক থেকে।
উল্লেখ্য, ইউএনডিপি’র সার্বিক সহযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার সংস্কার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।