চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার শংকরচন্দ্রপুর ইউনিয়নের জামিনুর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে একজন প্রাণিসেবা প্রদানকারী হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু জীবনের উন্নতির আশায় ২০০৮ সালে তিনি বিদেশ পাড়ি জমান। সেখানেও তার জীবনে আসে কঠিন সময়। প্রিয়জনদের থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন, একাকীত্ব আর ২০১৫ সালের একটি দুর্ঘটনা তাকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে তোলে। সেই দুর্ঘটনায় তিনি শারীরিকভাবে ভারী কাজের সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন এবং বাধ্য হয়ে একই বছর দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে জামিনুর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কলেজ জীবন শেষ করে তিনি স্থানীয় একটি এনজিওর মাধ্যমে পশুপালন বিষয়ে এক বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে বিদেশ হতে ফেরত এসে ২০১৮ সালে সরকারি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অধীনে পুনরায় তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। শুরুতে তার জন্য নিজেকে প্রাণিসেবা বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথ ছিল বন্ধুর। নিজ এলাকার অদক্ষ প্রাণিসেবা প্রদানকারীদের ভিড়ে তিনি কৃষকদের আস্থা অর্জনে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
২০২২ সালে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের একজন ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলেটেটর (ভিসিএফ) তাকে আরএমটিপি (Rural Microenterprise Transformation Project) প্রকল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রকল্প থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেয়ে তিনি একজন দক্ষ প্রাণিসেবা প্রদানকারী হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেন। এই স্বীকৃতির ফলে তিনি এলাকার কৃষকদের মাঝে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। জামিনুর বলেন, “আরএমটিপি’র আগে আমি মাসে ৫০ জনের বেশি কৃষককে সেবা দিতে পারতাম না। এখন আমি প্রতি মাসে ২৫০-৩০০ জন কৃষককে সেবা দিচ্ছি।” তার নিষ্ঠা ও সেবার মানে মুগ্ধ হয়ে আরএমটিপি প্রকল্পের সহায়তায় তিনি শংকরচন্দ্র গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘হুজাইফা ড্রাগ হাউস ও ভ্যাকসিন হাব’।
এই হাবের মাধ্যমে শুধু নিজের ব্যবসা নয়, অন্যান্য প্রাণিসেবা প্রদানকারীরাও তার কাছ থেকে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করছেন। এতে তার আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে একজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। জামিনুর এখন ফার্মেসির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অন্যের উপর দিয়ে নিজে সরাসরি গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের প্রাণিসেবা দিচ্ছেন। তার পরিশ্রমের স্বীকৃতি হিসেবে কৃষকেরা তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন এবং তার ব্যবস্থাপনায় এলাকায় গবাদিপশুর রোগ অনেকটাই কমে এসেছে। ভবিষ্যতে জামিনুর তার হুজাইফা ড্রাগ হাউসকে একটি আধুনিক ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখছেন, যেখানে আরো বড় পরিসরে সেবা দিয়ে এলাকার প্রাণিসম্পদ ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবেন।
উল্লেখ্য, আরএমটিপি প্রকল্পের আওতায় শংকরচন্দ্রপুরে ইতোমধ্যে ২২টি ভ্যাকসিন হাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রকল্পের অনুকরণে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে আরো ৮টি হাব গড়ে উঠেছে। এই হাবগুলো এখন পর্যন্ত প্রকল্প এলাকার ৪৬ হাজার ৭২৩ জন মানুষকে সেবা দিয়েছে।