ড. মো. সাজেদুর রহমানের জন্ম একটি কৃষক পরিবারে, যেখানে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন গ্রামীণ পশু চিকিৎসার চ্যালেঞ্জ। সরকারিভাবে পশু চিকিৎসা সেবা থাকলেও অনেক প্রান্তিক কৃষক সেই সেবা নিতে পারতেন না। ছোটবেলা থেকেই সাজেদুর এই সমস্যা দূর করার স্বপ্ন দেখতেন। তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে তিনি ভেটেরিনারি সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
স্নাতক শেষ করার পর তিনি একটি প্রাইভেট ফার্মে কাজ শুরু করেন, তবে কমিউনিটির প্রতি তার দায়বদ্ধতা তাকে নিজের এলাকায় ফিরিয়ে আনে। ২০১৯ সালে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে এসে দরিদ্র কৃষকদের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করেন। তবে যথেষ্ট প্রচার এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে তার মাসিক আয় ছিল মাত্র ১০-১৫ হাজার টাকা, যা তার আর্থিক সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট ছিল না। এরপরও তিনি তার কমিউনিটির জন্য স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। তিনি একটি আধুনিক ভেটেরিনারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে তিনি Rural Microenterprise Transformation Project-RMTP (আরএমটিপি) প্রকল্প সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার যোগ্যতা ও কমিউনিটির প্রতি তার প্রতিশ্রুতি দেখে আরএমটিপি তাকে সেবা সম্প্রসারণে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রকল্পের সহায়তায় তিনি “Veterinary Diagnostic and Laboratory Services” বিষয়ে ৫ দিনের প্রশিক্ষণে অংশ নেন এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, আরএমটিপি প্রকল্প হতে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজের জন্য মোট ব্যয়ের ৩০% অর্থ প্রদান করা হয়। এরপর তিনি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী বাজারে প্রতিষ্ঠা করেন ‘অ্যানিমেল কেয়ার পয়েন্ট’, যা তার এলাকার প্রথম বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ‘অ্যানিমেল কেয়ার পয়েন্ট’ প্রতিদিন ৩০-৩২ জন কৃষককে সেবা প্রদান করে, যা পশু স্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, তিনি তার উদ্যোগের মাধ্যমে কমিউনিটির জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। তিনি দুইজন সহকারী ডাক্তার, একজন ল্যাব সহকারী এবং একজন অফিস সহকারীকে নিয়োগ দিয়েছেন।
বর্তমানে তার ব্যক্তিগত আয় সব খরচ বাদ দিয়েও ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উন্নত সেবার কারণে পশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি কমিউনিটির অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ড. সাজেদুর রহমান এখন তার সেবাকে আরও সম্প্রসারণের স্বপ্ন দেখছেন। তিনি আরও অনেক কমিউনিটিতে পৌঁছাতে চান, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে চান এবং প্রান্তিক কৃষকদের জীবনমান উন্নত করতে চান। তিনি বলেন, “আরএমটিপি আমাকে আত্মবিশ্বাসে ভরিয়ে তুলেছে, যাতে আমি কৃষকদের ক্ষমতায়ন করতে এবং আমার কমিউনিটিকে উন্নত পশু চিকিৎসার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারি।”