চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা গ্রামের ছোট্ট একটি ঘরে রেহেনা খাতুনের বসবাস। ৪৬ বছর বয়সী এই গৃহিণী স্বামী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কঠিন জীবনযাপন করছিলেন। ১৯৯৮ সালে বিয়ের পর, চার শতক জমির উপর দাঁড়ানো একটি কাঁচা ঘর আর অগভীর টিউবওয়েল নিয়ে তাদের নতুন জীবন শুরু হয়। তবে, সেই টিউবওয়েলের পানি জমা হত মাটির গর্তে, যা মশা-মাছি ও অন্যান্য পোকামাকড়ের আড্ডাখানা। পানিতে দুর্গন্ধ আর অস্বচ্ছতা ছিল, তবুও কোনো বিকল্প না থাকায়, বাধ্য হয়ে সেই দূষিত পানিই পান করতো রেহেনার পরিবার।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রেহেনার জীবনে একটু একটু করে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। দিনগুলো কষ্টে কাটলেও আশার আলো দেখতে শুরু করেন রেহেনা, যখন তার ছেলে ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে মোবাইল সার্ভিসিং প্রশিক্ষণ নেয়। এমন সময়, রেহেনা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের চিৎলা পাতাবাহার ক্ষুদ্র অর্থ সমিতির সদস্য হন এবং নিয়মিত উন্নয়ন বিষয়ক আলোচনায় অংশ নিতে থাকেন।
এরমধ্যে একদিন, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার জাহানারা খাতুন চিৎলা গ্রামে আসেন এবং পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই আলোচনা থেকে রেহেনা “BD Rural WASH for HCD Project” এবং এর মাধ্যমে পাওয়া ঋণ সুবিধার কথা জানতে পারেন। রেহেনা সিদ্ধান্ত নেন ঋণ নিয়ে তার বাড়ির পানি ও স্যানিটেশন পরিস্থিতি উন্নত করার।
রেহেনা ৭০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সেই সঙ্গে আরও ৩৫ হাজার টাকা সংযোজন করে, তিনি সেফটি ট্যাংকসহ একটি পাকা পায়খানা এবং টিউবওয়েলসহ একটি গোসলখানা স্থাপন করেন। ব্যবহৃত পানি জমা করার জন্য একটি আবদ্ধ সোকয়েল ট্যাংকও তৈরি করেন। এখন রেহেনার বাড়ি স্যাঁতসেতে নয়, টিউবওয়েল থেকে স্বচ্ছ ও গন্ধমুক্ত পানি আসে। ফলে পরিবারের সদস্যদের অসুখ-বিসুখও কমে গেছে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকায় সবাই খুশি। রেহেনা বলেন, “নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন। ভাল পানি থাকলে জীবনও ভাল থাকে।”
ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তা রেহেনা ও তার পরিবারের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করেছে। তাদের বাড়ির পরিবেশ স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায়, পরিবারের সদস্যরা সুস্থ ও সুখী। রেহেনার এই সফলতার গল্প প্রমাণ করে, সঠিক সময়ে সঠিক সহায়তা কতটা কার্যকর হতে পারে।