রাশিদা বেগম পটুয়াখালী জেলার গোলখালী ইউনিয়নের ‘কৃষ্ণচূড়া প্রসপারিটি গ্রাম কমিটি’র সদস্য। ২০২০ সালে ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রসপারিটি প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমের মাধ্যমে অতিদরিদ্র খানা হিসেবে তার পরিবার নির্বাচিত হয় এবং তাকে কমিটির সদস্য করা হয়। পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় পরিচালিত এ কার্যক্রমের একজন অংশীজন হয়ে ধীরে ধীরে রাশিদা তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন।

অনেক অল্প বয়সে একই গ্রামের দিনমজুর রহমান ব্যাপারীর সাথে বিয়ে হয় রাশিদার। একমাত্র ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে ভালই চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ একদিন তার জীবনে নেমে আসে কালো অন্ধকার। স্বামী মারা যাওয়ায় শ্বশুরবাড়ির ঠিকানাও হারাতে হয় তাকে। ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা রাশিদা বাবার বাড়িতে চলে আসেন। মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে সন্তানকে বড় করেন। ছেলেকে বিয়ে দেয়ার পর সে তার বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে  গেলে রাশিদাকে অত্যন্ত কষ্টে একাকী দিন কাটাতে হয়। এমন সময় প্রসপারিটি প্রকল্পের সুবাদে তিনি হাঁস ও মুরগি পালনের উপর ২ দিনের একটি প্রশিক্ষণ পান এবং সিদ্ধান্ত নেন, অন্যের বাড়িতে আর কাজ না করে নিজেই কিছু করবেন।

প্রকল্পের সহকারী কারিগরি কর্মকর্তা লাইভলিহুড খানা এ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে রাশিদাকে ব্রয়লার মুরগি পালন করার পরামর্শ দেন এবং গত ২৮ অক্টোবর ২০২১ প্রকল্প অনুদান হিসেবে তাকে নগদ ১১,০০০ টাকা (১০০টি বাচ্চা, খাবার, হোপার, ব্রæডার, লাইট, ভ্যাকসিন, মেডিসিন ও অন্যান্য উপকরণ ক্রয় বাবদ) আর্থিকসহ কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে মুরগির শেড তৈরির জন্য তিনি ওয়েভ ফাউন্ডেশনের গোলখালী প্রসপারিটি ইউনিট হতে ২৫,০০০ টাকা বুনিয়াদ ঋণ গ্রহণ করেন।

অত্যন্ত সর্তকতা ও আন্তরিকতার সাথে রাশিদা মুরগি পালন করতে থাকেন। ১ম ধাপে ১০০ ব্রয়লার মুরগি পালন করতে তার মোট ব্যয় হয় ১৯,২০০ টাকা। ৩০দিন পর সেগুলোর মোট ওজন হয় ১৮০ কেজি। ১৮০ কেজি মুরগি ১৪০ টাকা কেজি দরে মোট ২৫,২০০ টাকায় বিক্রি করেন। যা থেকে তার নীট আয় হয় ৬,০০০ টাকা।   বর্তমানে ২য় ধাপে তিনি ১৫০টি ব্রয়লারের বাচ্চা শেডে পালন করছেন। মাত্র ১৩ দিনে বাচ্চা প্রতি ওজন হয়েছে প্রায় ৭০০ গ্রাম। রাশিদা প্রত্যাশা করছেন এ পর্যায়ে তার ১০,০০০ টাকা আয় হবে। ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর কারিগরি টিম নিয়মিতভাবে তার খামার পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাশিদা ভবিষ্যতে খামারে ৪০০-৫০০ মুরগি পালন করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি মনে করেন, যে অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস তার তৈরি হয়েছে, তা দিয়ে তিনি আরও সফল হবেন এবং একদিন তার খামারে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। রাশিদা বলেন, “অন্যান্য অতিদরিদ্র খানার সদস্যরাও যদি এরকম কিছু সহযোগিতা পেত, তাহলে তারাও আমার মতো সফলতা অর্জন করতে পারতো। ”

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt