২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক এসডিজির অগ্রগতি পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর ২০২১ এ খাদ্য ব্যবস্থা সম্মেলন-এফএসএস (Food Systems Summit-FSS) আহ্বান করা হয়। যদিও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি দূরীকরণে কর্মরত নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলোর সর্ববৃহৎ পরিসর সিএসএমের (Civil Society and Indigenous Peoples’ Mechanism-CSM for relations with the Committee on World Food Security-CFS) মতে, এফএসএস প্রক্রিয়াটি প্রথমত- মানবাধিকার ও জনগণের অধিকার বা ন্যায্যতার জন্য ব্যবস্থা পরিবর্তনের ভিত্তিতে হচ্ছে না;
দ্বিতীয়ত, এটি করপোরেট স্বার্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; এবং তৃতীয়ত, এর উদ্দেশ্য (আন্তর্জাতিকভাবে) সরকারি বা জনপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্থলে বহু-অংশীজনের প্ল্যাটফরমগুলোকে প্রতিস্থাপিত করা। এফএসএস তাদের অন্যতম কর্মপন্থা হিসেবে খাদ্য অধিকারের কথা উল্লেখ করলেও নারী, আদিবাসী জনগণ, শ্রমিক, কৃষক, পশুপালক, ভূমিহীন, ক্ষুদ্র কৃষক, জেলে, নগরাঞ্চলের দরিদ্র, ভোক্তা, যুব ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ সম্মেলনের কেন্দ্রে নেই। আমরা জানি, বীজসহ কৃষিখাত বাণিজ্যিকীকরণে বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর নানাবিধ তৎপরতা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের খাদ্য ব্যবস্থাকেই নতুন এক হুমকির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। করোনা মহামারী এসব চ্যালেঞ্জকে আরো জটিল করে তুলেছে। এ প্রেক্ষাপটে সিএসএমের ডাকা প্রাক-সম্মেলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নিম্নোক্ত কর্মসূচিসমূহ বাস্তবায়ন করে:
- ২৫ জুলাই: সিএসএমের সাথে সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে র্যালি এবং বৈশ্বিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবস্থানপত্র পাঠ।
- ২৬ জুলাই: বিশ্বব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত Social Media Strom এ অংশগ্রহণ।
- ২৭ জুলাই: CSM ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের এশিয় প্রতিনিধিদের মধ্যে ‘খাদ্য অধিকার ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ে জনসমর্থন গড়ে তুলতে করণীয়’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় সংহতি বক্তব্য প্রদান।
- ২৮ জুলাই: সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজন।
এসকল কর্মসূচিতে CSM ও CFS -এর সাথে সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা এবং খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক-এর জাতীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় ক্রমাগত করপোরেট প্রাধান্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে ‘খাদ্য অধিকার আইন চাই ‘খাদ্য ব্যবস্থায় করপোরেট আধিপত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই’- এ স্লোগানকে কেন্দ্র করে নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সারা পৃথিবীতে এখনও চরম ক্ষুধার শিকার ৮৫৪ মিলিয়ন নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য খাদ্য অধিকারের বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবিতে সরকারসমূহের রাজনৈতিক অঙ্গীকার তৈরি এবং প্রতিটি মানুষের মর্যাদার সাথে নিজের খাদ্যের সংস্থান করার সামর্থ্য অর্জনে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি তোলা হচ্ছে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে। এখন সময় হয়েছে, খাদ্য অধিকারকে দানশীলতা ও মানবাধিকারের তত্ত্বীয় ধারণা থেকে বের করে বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ এবং যথাযথ ফলাফলে রূপান্তরিত করার জন্য সচেষ্ট হবার।