গ্রামের কর্মচঞ্চল ও উদ্যোমী নারী সবুরা খাতুন অক্লান্ত পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দারিদ্র্যাবস্থা থেকে বেরিয়ে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। সবুরা-রফিকুল দম্পতি তাদের এলাকায় এখন একটি প্রেরণার নাম। সবুরা হাসি মুখ নিয়ে বলেন, “যদি কুনুদিন সুযোগ আসি, তালি বড় কইরে একটা গরুর ফারাম দেব” সবুরা এখন সেই স্বপ্ন থেকে খুব বেশি দূরে নেই।
অর্থাভাবে মাত্র ১৫ বছর বয়সে বাবা-মায়ের ইচ্ছায় মো. রফিকুল মন্ডলের সাথে বিয়ে হয় মোছা. সবুরা খাতুনের। স্বামী বেকার হওয়ার কারণে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। স্বামী রফিকুল মন্ডল পৈত্রিকসূত্রে ২৭ শতক জমি পেলেও চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় সেখান থেকেও তেমন আয়-রোজগার হতো না। এমতাবস্থায় সবুরার পরামর্শে তার স্বামী একটি ভ্যান কেনেন। ভ্যান চালিয়ে যে আয় হতো, সেখান থেকে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি সবুরা কিছু টাকা জমাতে থাকেন। এভাবে ৩ হাজার টাকা জমিয়ে ২০০৭ সালে একটি গরু কেনেন। গরু পালন লাভজনক হওয়ায় তিনি গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করেন। যার জন্য প্রয়োজন হয় পুঁজির। পুঁজি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ঐ বছরই সবুরা ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর মেহেরপুর ইউনিটে যোগাযোগ করেন এবং সেখান থেকে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ঋণ কম্পোনেন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন।
ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর সাথে যুক্ত হওয়ার পর সবুরা বেগম গরু পালনের উপর উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে ও সহজে পুঁজি সংগ্রহের সুযোগ পেয়ে সবুরা এখন গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। গরুগুলো পরিচর্যার জন্য তিনি সার্বক্ষণিক নিজেকে নিয়োজিত রাখেন এবং প্রত্যেক বছর ৩-৫টি গরু বিক্রি করেন। টাকার হিসেবে যা থেকে প্রতি বছর প্রায় ১.৫-৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করেন। বর্তমানে সবুরার ৬টি গরু রয়েছে এবং তার মুনাফার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষুদ্র উদ্যোগে সবুরার এখন ১ লক্ষ টাকার ঋণ চলমান রয়েছে।
অভাব-অনটনের কারণে যে সবুরা একসময় চোখে অন্ধকার দেখতেন সেই সবুরার চোখে এখন অফুরন্ত সম্ভাবনা আর স্বপ্নের ভিড়। তিনি এখন তার দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারছেন। বড় ছেলে ৮ম শ্রেণী এবং ছোট ছেলে ৭ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করছে। বিয়ের পরে সবুরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন এখন স্বার্থক হতে চলেছে। গরু পালন করে আত্মনির্ভরশীলতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সবুরা-রফিকুল দম্পতি এলাকার মানুষের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন।