রাজশাহী শহরের ঘোষপাড়া এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পারমিতা নন্দী। অভাব-অনটনের কারণে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর মাত্র ১৭ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঢলসা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ভালই চলছিল সংসার জীবন। কিন্তু সন্তান জন্মের ২ বছর পর স্বামী হঠাৎ দ্বিতীয় বিয়ে করলে পারমিতার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার অমানিশা।
নানা অশান্তির মধ্যে স্বামীর সংসারে থাকতে না পেরে ২০১২ সালে পারমিতা চলে আসেন তার বাবার বাড়িতে। বাবা-মা’র সংসারে তখনও অভাব-অনটন। এমন পরিস্থিতিতে খুব সমস্যয় পড়ে যান পারমিতা। বৃদ্ধ বাবা-মা’র সংসার খরচ, সন্তান ও নিজের খাওয়া-পড়া সব মিলিয়ে দূর্বিসহ হয়ে পড়ে তার জীবন। এ অবস্থায় বসে না থেকে শহরের একটি প্রাইভেট স্কুলে নামমাত্র বেতনে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি ২০১৪ সালে মাত্র ১০০০ টাকা পুঁজি দিয়ে পারমিতা বুটিকস এর কাজ শুরু করেন। সারাদিন শিক্ষকতা আর রাত জেগে বুটিকস এর কাজ করতে থাকেন। এভাবে প্রায় ২ বছর কেটে যায়। কিন্তু পারমিতার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। ব্যবসা বড় করার জন্য পারমিতা যখন দিশেহারা, ঠিক সে সময় ২০১৬ সালে প্রতিবেশী সুমি রাণীর সাথে তার আলাপ হয়। সুমি তাকে ওয়েভ ফাউন্ডেশন ০৭৫, রাজশাহী সদর ইউনিট অফিস পরিচালিত সাগরি মহিলা সমিতির সদস্য হওয়ার পরামর্শ দেন। পারমিতা কোন প্রকার চিন্তা না করেই দ্রুত সমিতির সদস্য হন এবং ২০১৯ সালে সংস্থা থেকে ৫০,০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। ঋণের পুরো অর্থ দিয়ে কাপড় কিনেন এবং সেই কাপড়ে নিজে হাতে রং তুলি দিয়ে কাজ শুরু করেন। তৈরিকৃত কাপড় বিভিন্ন মেলায় স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিক্রয় করতে থাকেন। এভাবে ক্রমেই তার ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে এবং সফলভাবে তিনি প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করেন।
বর্তমানে পারমিতা ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ৮০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে বর্ধিত পরিসরে বুটিকস্ হাউজ পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন মেলায় বিক্রয়ের পাশাপাশি অনলাইনেও (https://www.facebook.com/Sree-Handicrafts-108866424203353/) ব্যবসা পরিচালনা করছেন। প্রতি মাসে প্রায় ৮০,০০০-৯০,০০০ টাকার পণ্য বিক্রি করছেন। তার হ্যান্ডিক্রাফটস্ ও বুটিকস্ এ ২৪ জন নারী এবং ৪ জন পুরুষ নিয়মিত কাজ করছেন।
কঠিন লড়াই আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে সফল উদ্যেক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরে পারমিতা আজ সমাজের সফল দৃষ্টান্ত। তবে তিনি এখানেই থেমে থাকতে চান না। পারমিতা স্বপ্ন দেখেন, একদিন বুটিক হাউজটি সবার কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে আর এই স্বপ্নপূরণে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরম বন্ধুর মতো সবসময় তার পাশে থাকবে।