দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া মোছা. রশিদা বেগমের বিবাহ হয় আরেক দরিদ্র পারিবারে। অভাবের সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত রশিদা এ অবস্থা আর মানতে পারছিলেন না। তাই স্বামীর সাথে যৌথভাবে কাজ করে পরিবারের স্বচ্ছলতা আনার ব্যাপারে নানাবিধ চিন্তা করছিলেন। কৃষক পরিবারের মেয়ে হওয়ায় কৃষি কাজ সম্পর্কে তার ধারণা ছিল ভালই। একদিন রশিদা তার স্বামী ছানোয়ারের সাথে পান চাষের পরিকল্পনা করেন।
পরিকল্পনা মাফিক দেরি না করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই স্বল্প পরিসরে ৫ শতক জমিতে পান চাষ শুরু করেন। কোনো সমস্যায় পড়লে উপজেলা কৃষি অফিসের ব্লক সুপারভাইজারের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। এভাবে রশিদা এবং তার স্বামীর যৌথ উদ্যোগ ভালভাবেই চলতে থাকে। কিছুদিন পর বড় পরিসরে চাষ বাড়াতে চাইলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুঁজি। এমন সময় পাশের বাড়ির জহুরা খাতুনের পরামর্শে রশিদা ওয়েভ ফাউন্ডেশন ০০৬, চুয়াডাঙ্গা ইউনিট অফিস পরিচালিত আকুন্দ ইত্যাদি মহিলা সমিতির সদস্য হন। ২০১৬ সালে এই সমিতি থেকে সাপ্তাহিক কিস্তির চুক্তিতে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। তাদের স্বপ্নের প্রকল্প একটু বড় করার জন্য এই টাকা দিয়ে ১ বিঘা জমি বন্ধক নেন। সফলভাবে প্রথম দফার টাকা পরিশোধ করে ধাপে ধাপে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পান চাষ আরও সম্প্রসারণ করতে থাকেন। রশিদার সংসারে আসতে থাকে স্বচ্ছলতা। উপার্জিত আয় থেকে নিজের নামে ৫ শতক বসতভিটার জমি ক্রয় করেন এবং কিছু নগদ টাকাও জমান।
এদিকে কোভিড-১৯ এর কারণে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে, ওয়েভ ফাউন্ডেশন তার সদস্যদের Livelihood Restoration Loan কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্প সুদে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে ঋণ প্রদান শুরু করে। বিষয়টি জানতে পারলে মোছা. রশিদা তার স্বামীর সাথে পরামর্শ করে ২৩ মার্চ ২০২১ এ প্রকল্প থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এর সাথে পান চাষ হতে জমানো ৫০ হাজার টাকা যুক্ত করে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি গরু ক্রয় করেন। পরবর্তীতে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে গরুটি বিক্রয় করে ১৮ হাজার টাকা লাভ করেন।
একদিকে পান চাষ অন্য দিকে গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্প, এই যৌথ চাষে রশিদা এবং তার স্বামী যৌথভাবে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছে। রশিদা আনন্দের সাথে বলতে থাকেন, “দুঃখের দিন এখন শেষ। আমাদের দেখে এলাকার অন্য মানুষ-জনও স্বপ্ন দেখছে। সবাই এখন আমাদের অনেক মূল্যায়ন করে। ওয়েভ ফাউন্ডেশন পাশে ছিল বলেই আজ আমাগো স্বপ্ন পূরণ হইছে”।