মোছা. মিনারা বেগমের বাড়ি ছিল বরিশাল জেলার বড়নদী থানার বরইগঞ্জ গ্রামে। নদীর ধারে বাড়ি হওয়ার কারণে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে তার পরিবার চলে আসে খুলনা শহরে। তখন থেকেই দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে শুরু হয় মিনারার সংগ্রাম।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে মিনারা বেগম ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর একটি প্রকল্পের কথা জানতে পারেন। যে প্রকল্পের অধীনে জলবায়ুর প্রভাবে খুলনা মহানগরে স্থানান্তরিত অভিবাসী ও দরিদ্র পরিবারসমূহের অভিযোজিত জীবন-জীবিকার উন্নয়নে মাচাসহ ছাগল দেয়া হয়। পরবর্তীতে দলীয় আলোচনায় অংশগ্রহণ করে মিনারা প্রকল্পের একজন উপকারভোগী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হন এবং ১টি মাচাসহ ছাগলের ঘর ও ২টি মা ছাগল পান। এছাড়া সংস্থা কর্তৃক ছাগল পালন বিষয়ে ২দিনের প্রশিক্ষণও পান। প্রশিক্ষণ থেকে মিনারা কত মাস পর পর ছাগলকে পি.পি.আর. টিকা দিতে হবে এবং কত মাস পর কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে এ বিষয়ে ভালভাবে জানতে পারেন। এ সকল পরামর্শ মেনে ছাগল পালন করায় বর্তমানে তার খামারে ২টি মা ছাগল এবং ৪টি খাসি ছাগল রয়েছে। খাসি ছাগলগুলোর মুল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। মিনারা নিজ মুখেই বলেন, “ছাগলের কোন অসুখ হলে এখন নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পায়। নিয়মিত টিকা দেয়ার ফলে আমাদের ছাগলের রোগ কম হয়। আমার ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়, তাই আমি আশা করছি আগামী ৬ মাসে আমার খামারে ১০টি ছাগল হবে।” এখন মিনারার বয়স ৪০ আর স্বামী মো. শহীদুল হকের ৫০। বর্তমানে তারা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত ১৪নং ওয়ার্ডের রায়েরমহলে সরকারি খাস জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। তাদের ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। তারা সকলেই পড়াশোনা করছে। ওয়েভের সাথে যোগাযোগ হওয়ার আগে স্বামী ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় করতো, তা দিয়ে তাদের সংসার চালানো খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এখন তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা এসেছে। এছাড়া ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও জিআইজেড-এর পরামর্শে মিনারা বাড়িতে সবজির বাগান করেছেন। সেখান থেকেও অল্প কিছু আয় হচ্ছে।
মিনারা আরও বলেন, “ওয়েভ ফাউন্ডেশন ও জিআইজেড আমাদের যে উপকার করছে তা কখনো ভোলার নয়। ওনাদের সহায়তায় আমরা এখন ভালভাবেই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।”ওয়েভ থেকে পাওয়া ছাগল মিনারার সংগ্রামী জীবনে আলোর সন্ধান দিয়েছে। ছাগল তার জীবনে এখন এক বড় সম্পদ। মিনারার বিশ্বাস নিয়ম মেনে মাচা পদ্ধতিতে ছাগল পালন করলে, একদিন তার খামার অনেক বড় হবে। প্রতিমাসে সেখান থেকে ৬-৭ হাজার টাকা আয় হবে।