রাসায়নিক সারের ব্যবহার ছেড়ে ভার্মি কপোস্টের (কেঁচো সার) দিকে ঝুঁকছেন চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা। ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় তৃণমূলের কৃষকরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছেন কেঁচো সার। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে এ সারের উৎপাদন। যার সুফল পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের যত্রতত্র ব্যবহারে মাটির জীবনবায়ু প্রায় ওষ্ঠাগত। শস্যের বাড়তি ফলন নেই, হাসি নেই কৃষকের মুখে। এ অবস্থায় আমাদের চাষাবাদে জৈব সার, কম্পোস্ট সারের বিকল্প নেই। বিভিন্ন প্রকার জৈব বস্তুতে (উদ্ভিদ ও প্রাণিজ) বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর পাচন ক্রিয়ার ফলে জমিতে প্রয়োগের উপযোগী যে জৈব সার পাওয়া যায় তাই ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। তবে সব প্রজাতির কেঁচো ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরির জন্য উপযোগী নয়, এ কাজে Red worm/Red wigglers (Eisenia fetida) বহুল ব্যবহৃত প্রজাতি। উপযুক্ত পরিবেশে ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরিতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগে। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির নিরাপদ স্বাস্থ্যে ভীষণ জরুরি। কেঁচো কম্পোস্টে অন্যান্য কম্পোস্টের চেয়ে প্রায় ৭-১০ ভাগ পুষ্টিমান বেশি থাকে। প্রথম দিকে কম্পোস্ট তৈরি হতে সময় বেশি লাগে (৬০-৭০ দিন), পরবর্তীতে মাত্র ৪০ দিনেই কম্পোস্ট তৈরি হয়। ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন শাক-সবজি, ফলবাগানে এই সার ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে, মাটিতে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণক্ষমতা বাড়ে, বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। এছাড়া মাছ চাষের ক্ষেত্রে কেঁচো সার প্রয়োগ করে রাসায়নিক সার ও অন্য খাবার সামান্য ব্যবহারেই কম খরচে অতি দ্রæত সুস্বাদু মাছ উৎপাদন করে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার মদনা গ্রামের মো. সোহাগ হোসেন এসএসসি পাশের পর কৃষি বিষয়ক কিছু করার চিন্তা থেকে জৈব সার উৎপাদনের মনস্থির করেন। ২০১৫ সালে কেঁচো সার বিষয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সোহাগ উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেন। সে বছরেই ছয় চালানে মোট ১০০০ কেজি কেঁচো সার উৎপাদন করে এলাকার বিভিন্ন সবজি চাষীর কাছে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। চাষীরা সার ব্যবহার করে উপকার পাওয়ায় ধীরে ধীরে তার কেঁচো সারের চাহিদা ও ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে রিং সংখ্যা এবং পাকা চেম্বার বাড়িয়ে সোহাগ ব্যাপকহারে সার উৎপাদন শুরু করেন।
২০১৮ সালে ওয়েভ ফাউন্ডেশন-এর কারিগরি সহায়তায় ৫০টি রিং ও ২০টি পাকা চেম্বার দিয়ে সোহাগ রংধনু ভার্মি কম্পোস্ট নামে কেঁচো সারের খামার প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তার খামারে ২০০টি রিং ও ৬০টি পাকা চেম্বারে প্রতি মাসে ২০ টন সার উৎপাদিত হয়। তার উৎপাদিত কেঁচো সারের সুনাম আশেপাশের এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। তার খামারের উৎপাদিত সার চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হচ্ছে এবং লাল তীর ও এসিআই কোম্পানিও ক্রয় করছে।