বাড়ির উঠানে পানির ট্যাংক। ট্যাংকের কাছে এগিয়ে গেলেই বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে। তাহলে কি পুকুর ছাড়াও মাছ চাষ করা সম্ভব? কিন্তু কীভাবে? মনের মধ্যে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পদ্ধতিতে মাছ চাষের এ পদ্ধতিকে বলা হয় রি-সার্কুলেটিং একুয়া কালচার সিস্টেম। যাকে সংক্ষেপে রাস (RAS) পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলো, অল্প ঘনত্বে অধিক মাছ উৎপাদন করা। পুকুরে যেখানে প্রতি শতাংশে ৪০০ থেকে ৫০০টি মাছ চাষ করা যায়, সেখানে এ পদ্ধতিতে প্রতি কিউবিক মিটারে ১ হাজার ২০০ মাছ চাষ করা সম্ভব।
এ পদ্ধতিতে একই পানি বিভিন্ন ফিল্টার ও যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে পরিশোধিত করে পুনরায় মাছের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। যার ফলে পানি অপচয়ের সুযোগ নেই। এছাড়া মাছের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের সুব্যবস্থা রাখা হয়। মূলত চীনে RAS পদ্ধতির উদ্ভাবন হলেও বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ আমাদের দেশেও এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে দিন দিন জনসংখ্যা বেড়েই চলছে। আর কমে যাচ্ছে চাষযোগ্য জমি। এছাড়া যাদের মাছ চাষ করার পর্যাপ্ত জায়গা নেই কিন্তু মাছ চাষ করতে ইচ্ছুক, তারাও এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন এবং নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন। এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পিকেএসএফ-এর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় মাছ চাষের আগ্রহ রয়েছে কিন্তু নিজস্ব পুকুর নাই, এমন ২০ জনকে নিয়ে RAS পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের মাছ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
এই পদ্ধতিতে মাছ চাষে চাষীদের অভ্যস্ত করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা হিসাবে আদর্শ খামার স্থাপন, উচ্চমূল্যের মাছের পোনা সরবরাহ, মাছের খাদ্য সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ সেবা প্রদানে সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এসব খামারিদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নমনীয় ঋণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে মাছ চাষীরা ট্যাংকে পাবদা, গুলশা, শিং, মাগুরের মতো বিভিন্ন উচ্চমূল্যের মাছ চাষ করছে। চাষীদের বক্তব্য অনুযায়ী ‘এই পদ্ধতিতে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, মাছের গুণগত মান হয় উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত এবং মাছের মৃত্যুহার নেই বললেই চলে।’ মাত্র পাঁচ সপ্তাহে মাছের ওজন বাড়ে ১০ গ্রামেরও বেশি। চার মাসে হয়ে উঠে বিক্রির উপযোগী। RAS পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের মাছ চাষের উদ্যোগটি বাস্তবায়নের ফলে বিষয়টি সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছে। তবে এ পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল। ব্যয়বহুল হলেও মাত্র দুই বছরের মধ্যে মুনাফার মুখ দেখা সম্ভব। জনবহুল আমাদের বাংলাদেশে জমি সংকট প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই ব্যক্তি উদ্যোগে এ পদ্ধতিতে যদি মাছ চাষ করা যায়, তাহলে মাছ চাষে দেশে বিপ্লব ঘটবে।