জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অথর্বছরের জাতীয় বাজেটকে কেন্দ্র করে গত ২৬ জুন ২০২২ ‘জাতীয় বাজেটে স্থানীয় সরকারের জন্য বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরামের চেয়ারপার্সন ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ’র সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। ফোরামের সমন্বয়কারী মহসিন আলীর সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।
সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. জেবউননেছা; পরিকল্পনা কমিশনের রাজস্ব ও মুদ্রানীতি অনুবিভাগের উপ-প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান সরকার; ইউএনডিপির ডেমোক্রেটিক গভার্নেন্স পোর্টফলিওর প্রোগ্রাম এনালিস্ট মো. মোজাম্মেল হক; ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ শাহান; দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তপন বিশ্বাস প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের সদস্যরা এতে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “আজকের এ আলোচনা সময়োপযোগী এবং আমাদের সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আমাদের ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও আমলাতান্ত্রিক বিন্যাসের অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করে স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসতে হবে।” ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, “সরকারের দিক থেকে এ বিশ্লেষণকে মেনে নিয়ে এগিয়ে গেলে গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা সম্ভব হবে।” এছাড়াও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. কাজী মারুফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি এখন একাধারে করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও বৈষম্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন- এরকম বৈপরিত্যমূলক সঙ্কট ও সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে। এ পরিস্থিতিতে আর্থ-সামাজিক পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় সরকারকে সহযোগী ভূমিকা পালন করতে হবে, যথাযথ বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।
তিনি যেসব সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপন করেন, তার মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত অনুদানের পরিমাণ সম্পর্কে সুনিশ্চিত তথ্য প্রদান করতে হবে;
- মধ্যমেয়াদে স্থানীয় সরকারে অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ করতে হবে;
- স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কার্যগত সীমারেখা স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে;
- নিজস্ব উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
- কর শিডিউল আধুনিকায়ন করতে হবে;
- কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কর/রাজস্ব ভাগাভাগি পদ্ধতিকে যুক্তিসংগত করতে হবে;
- করোনা-উত্তর পুনর্বাসন ও পুনরুদ্ধারের কার্যক্রমে স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করতে হবে; এবং
- টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের স্থানীয়করণে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলিকে সক্রিয় করে তুলতে হবে।