গত ২৩ মে ২০২৩ ওয়েভ ফাউন্ডেশন কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘প্রোমোটিং সিটিজেনস্ পার্টিসিপেশন ফর প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন’ প্রকল্পের উদ্যোগে জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দি ডেইলি স্টারের আয়োজনে এবং ক্রিশ্চিয়ান এইড-এর সহায়তায় “প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা: কেন এবং কিভাবে” শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।

আলোচনায় আরো অংশ নেন ক্রিশ্চিয়ান এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন; বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয় (সানেম) এর গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা; বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানর অধ্যাপক এমএম আকাশ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক কর, নিরীক্ষা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারস (পিডব্লিউসি) এর কান্ট্রি লীড মামুন রশীদ।

বৈঠকের শুরুতে প্রকল্প কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পরিচালিত গবেষণার সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন গবেষণা সহকারী সানজিদা ইসলাম ও আব্দুস সবুর। গোলটেবিল বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “সরকারের পরিসংখ্যান মতে, বেশিরভাগ খাতে উন্নয়ন প্রতীয়মান হচ্ছে, একই সাথে বিভিন্ন জায়গায় বৈষম্যও বেড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ভ্যাট যেন নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়, সে লক্ষ্যে সরকার সামাজিক নিরাপত্তার বলয় জোরদার করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের (চাল, ডাল, তেল) উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি পরিকল্পনায় রেখেছে। একই সাথে দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্পদের উপর কর, উত্তরাধিকার কর, ঋণ শুল্ক, বেওয়ারিশ সম্পত্তির কর এবং ওয়াকফ সম্পত্তির উপর কর ধার্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, “ট্যাক্স আমাদের দেশের সার্বিক উন্নয়নের সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পত্তির একটি বিষয়। ট্যাক্স প্রাপ্তির উপর যেহেতু আমাদের জাতীয় আয় ও বাজেটের আকার নির্ভর করে, তাই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য কর ন্যায্যতা নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। অথচ সাধারণ মানুষের ট্যাক্স সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই। ধনী, উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণী ট্যাক্স নিয়ে সবসময় সমলাচনা করে থাকে। মধ্যবিত্তের একাংশ, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের কর ভীতির পাশাপাশি রয়েছে কম-বেশি কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা।” এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পেছনে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর প্রদান করার প্রবণতার ঘাটতি, কর অ্যাসেসমেন্টে জটিলতা, কর ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণের উল্লেখ করেন। নাগরিক সমাজের সংগঠন হিসেবে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে একসাথে কাজ করার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

গোলটেবিল বৈঠকে সকলের আলোচনার প্রেক্ষিতে নিম্মলিখিত সুপারিশসমূহ উঠে আসে-

  • সরকারের রাজস্ব আয়ের ব্যবস্থা ও অনুশীলনকে শক্তিশালী করা এবং সমাজের ধনী ও সক্ষম ব্যক্তিদের নিকট থেকে উপযুক্ত পরিমাণ কর আদায়ের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রমে যথাযথ পরিমাণ বরাদ্দ প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট নীতির সংস্কার করা;
  • উচ্চস্তরে কর-জিডিপি আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করা;
  • কর অব্যাহতি কমানো;
  • কর সম্পর্কিত তথ্যের অভিগম্যতা (এনবিআর ডেটা সেন্টার) বাড়ানো;
  • নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, যুব এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে নাগরিকদের মধ্যে কর প্রদান বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা; এবং
  • নাগরিক সমাজ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়- উভয় পক্ষের পারস্পরিক মতবিনিময় ও সংলাপের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য অংশগ্রহণমূলক ক্ষেত্র তৈরি করা।
Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt