জলি রানী ঘোষ (৫০) নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের একজন গৃহিনী। বাল্য বয়সেই বাবার বাড়ি নওগাঁ হতে বৈবাহিক সূত্রে স্থান হয় নাটোরে। বিয়ের পর থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে চলতে থাকে জলির দিনলিপি। চারজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী সনত কুমার ঘোষ পেশায় একজন ভ্যান চালক। ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোন মতে দিনের চাল কেনা সম্ভব হলেও তরকারি কেনা সম্ভব হয় না। সে কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
এভাবে চলতে চলতে জলি রানী হিমসিম খাচ্ছিলেন। কিন্তু এত সহজে তিনি ভেঙ্গে পড়েননি। এ রকম পরিস্থিতিতে তার মাথায় বুদ্ধি আসে, ব্যবসা করবেন। কিন্তু কী ব্যবসা? তিনি ঠিক করলেন বাবার হাত ধরে শেখা দই ও মিষ্টির ব্যবসা করবেন। কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়? টাকার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রচেষ্টা চালালেও কেউ তাকে সাহায্য করে না। এমতাবস্থায় জলি রানী তার সমস্যার কথা প্রতিবেশী পারভিনের সাথে আলাপ করলে পারভিন তাকে ওয়েভ ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নেয়ার পরামর্শ দেন।
সেই মোতাবেক জলি রানী দু-বছর আগে ২০২০ সালে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নাটোর সদর ইউনিট পরিচালিত ছাতনী গ্রামের মৌফুল সমিতিতে যুক্ত হয়ে ৫০হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দই-মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন। তার প্রস্তুতকৃত দই-মিষ্টি ঘরোয়া পরিবেশে বিক্রির পাশাপাশি স্বামী সনত কুমার দোকানে দোকানে গিয়ে পাইকারীভাবে বিক্রি শুরু করেন। এভাবে ঘুরতে থাকে তাদের স্বচ্ছলতার চাকা। এখন জলি-সনত দম্পতি প্রতি দিন দুই মন দই ও দুই মন মিষ্টি তৈরি করেন। ১ম দফা ঋণ পরিশোধের পর ২০২১ সালে পুনরায় ওয়েভ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন।
বর্তমানে জলি রানীর সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আগের মতো অভাব-অনটন নেই, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ নেই। জলি বলেন, “আমার সংসারে আগের চেয়ে এখন অনেক শান্তি। আমরা খুব ভালো আছি, সুখে আছি। দুর্দিনে পাশে দাঁড়ানোর জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।”