দেশে দুর্যোগ সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলো কার্যকর করা ও সেগুলোতে যুব প্রতিনিধিদের সংযুক্ত করে সে অনুযায়ী যথাযথ বরাদ্দ এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২৬ আগস্ট ২০২১ সংস্থার উদ্যোগে ‘ক্রমবর্ধমান দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনা ও যুব সমাজ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অক্সফ্যাম বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ওয়েবিনারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, এমপি। এতে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং গওহার নঈম ওয়ারা, লেখক ও গবেষক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহসিন আলী, নির্বাহী পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আনোয়ার হোসেন, উপ-নির্বাহী পরিচালক, ওয়েভ ফাউন্ডেশন এবং `Asia Community Disaster Preparedness & Transformation (ACT) Program’ শীর্ষক প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধরেন মোসাম্মাৎ সাইদা বেগম, প্রোগ্রাম অফিসার, পাবলিক হেলথ প্রোমোশন, অক্সফ্যাম বাংলাদেশ। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী অনিরুদ্ধ রায়ের সঞ্চালনায় এই আয়োজনে যুক্ত থেকে আরও বক্তব্য প্রদান করেন প্রকল্প এলাকা বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জেলার যুব প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন।
বক্তব্য প্রদানকালে প্রধান অতিথি ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি এ ধরনের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশনকে ধন্যাবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যবস্থাপনারপাশাপাশি এতে যুব সমাজকে সর্বদা সম্পৃক্ত করে থাকে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে যুবদের সম্পৃক্ততা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” এছাড়াও তিনি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যুবদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রতিশ্রতি ব্যক্ত করেন। একইসাথে এ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মহসিন আলী দুর্যোগকালে সরকারের উদ্যোগ এবং যুব সমাজের ভূমিকা ও করণীয় বিষয়ে নিন্মলিখিত সুপারিশসমূহ তুলে ধরেন:
- ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের প্লাবন থেকে রক্ষা পেতে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, নদীশাসনসহ স্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, খাল সংস্কার এবং সাইক্লোন সেন্টার সংস্কার ও সেন্টার সংশ্লিষ্ট সংযোগ রাস্তাসমূহ পাকা করাসহ দুর্যোগ সহিষ্ণু অবকাঠামো নির্মাণ করা।
- দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী (SOD) ২০১৯ অনুযায়ী, স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিসমূহে (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা) যুব প্রতনিধিদিরে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা করা এবং কমিটিসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা।
- ক্রমবর্ধমান দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবলোয় সরকার ও রেডক্রিসেন্ট এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী (সিপিপি) ভলান্টিয়ারদের সাথে আরো বেশী করে যুবদের সম্পৃক্ত করা।
- তৃণমূল পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলির সকল সদস্যকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ (বিশেষত সতর্ক সংকেত প্রচার, ফার্স্ট এইড, সার্চ এন্ড রেসকিউ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি) প্রদানের ব্যবস্থা করা, যাতে তারা দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।
- দুর্যোগকালে নদীভাঙ্গন এবং জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার যাদের ঘর-বাড়িসহ সহায়-সম্পদ ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষী ও কৃষকদের ফসলের ক্ষতি অনুযায়ী সকলকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা।
- সুন্দরবনের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, বৃক্ষরাজি এবং বন্যপ্রাণীর যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিকর যেকেনো কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা। অন্যান্য উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা এবং স্থানীয় লোকায়ত জ্ঞানকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজে লাগানো।
- দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বিশেষত উপকূল অঞ্চলে দুর্যোগ কেন্দ্রিক সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে দুর্যোগ প্রতিরোধে স্বল্পমেয়াদী-মধ্যমেয়াদী-দীর্ঘমেয়াদী যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী যথাসময়ে সরকারি বরাদ্দ প্রদান ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- প্রতিবছর দুর্যোগের র্পূবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ সকল প্রতিরোধ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়রে পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঠিকাদারদের কার্যক্রম যথাযথভাবে মনিটরিং এবং সে প্রেক্ষিতে কোন গাফিলতি দেখা দিলে সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা নিশ্চিত করা।