দুই সন্তানের জননী মোছা. কহিনুর বেগমের জন্ম ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কুলতলা গ্রামে। ২০১৩ সালের ১০ জুন এ এলাকায় সংস্থার সোহাগ মহিলা সমিতির সদস্য হিসেবে যুক্ত হন কহিনুর। সে বছরই ১১ নভেম্বর, ১ম দফায় ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন এবং এর সাথে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ১টি গরু ক্রয় করেন। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে দারিদ্র্যকে জয় করে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছানো কহিনুরের এটা ছিল শুরুর গল্প।
তাদের মা-বাবা আর আট ভাই-বোনের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। সংসারের প্রথম কন্যা সন্তান হওয়ায় ৮ম শ্রেণীর বেশি লেখাপড়া হয়নি কহিনুরের। মাত্র ১৬ বছর বয়সে একই গ্রামের দিনমজুর মো. মুক্তার আলী মুন্সির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। স্বামীর সংসারে এসেও ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না, মেলে না সুখের ঠিকানা। কহিনুর তার অভাবী সংসারের কথা মা-বাবাকে জানালে তারাও কোনো সহযোগিতা করতে পারে না। এমন সময় তিনি তার স্বামী মুক্তার আলীর সাথে আলোচনা করে ওয়েভ থেকে ঋণ নিয়ে গরু পালন শুরু করেন।
প্রথম ক্রয় করা গরুটি লালন-পালন করে বিক্রি করলে তাদের কিছু টাকা লাভ হয়। অতঃপর ২য় দফায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে, উক্ত ঋণ ও পূর্বের গরু বিক্রির টাকা দিয়ে তারা আরও ২টি গরু ক্রয় করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর অর্জিত লাভের টাকা ও ঋণের টাকা যুক্ত করে পরবর্তী বছরগুলোতে গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি কহিনুর সংস্থা থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার খামারে মোট গরুর সংখ্যা ৩২টি, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ২০ লক্ষ টাকা। অভাব-অনটনের কারণে এক সময়ের দিশেহারা কহিনুর, যার দুবেলার খাবার ঠিকঠাক জুটতো না সেই এখন গরু পালন করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন। মাঠে ৫ বিঘা জমি ক্রয়সহ নিজেদের পাকা ভিটে বাড়ি করেছেন। বর্তমানে যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। আত্মনির্ভরশীল কহিনুরের মনোবল এখন এতটাই দৃঢ় যে, আগামীতে কোনো প্রকার ঋণ ছাড়াই তিনি সকল কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন। তার স্বামীকে এখন আর অন্যের ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করতে হয় না। সন্তানদেরও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন।
গ্রামের কর্মচঞ্চল উদ্যোমী নারী কহিনুর অক্লান্ত পরিশ্রম আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দারিদ্র্যাবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। অশ্রুশিক্ত কন্ঠে কহিনুর বেগম বলেন, ‘গরুর খামারটি অনেক বড় করতে চাই, যাতে আমার মতো অনেক কহিনুরের দুবেলা খাবারের সংস্থান হয়।’