অজেয় মনোভাব, কঠোর পরিশ্রম এবং তীব্র আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে গেছেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার প্রথম পাড়া, জয়নগরের চঞ্চল হোসেন। ২০২২ সালে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় ওয়েভ ট্রেড ট্রেনিং সেন্টার, দর্শনা কর্তৃক বাস্তবায়িত Skill for Employment Investment Program-SEIP প্রকল্পের অধীনে ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
চঞ্চলের বাবা মো. আব্দুল মান্নান পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও অসুস্থতার কারণে নিয়মিত কাজ করতে পারতেন না। পরিবারের আর্থিক সংকট দিনে দিনে তীব্র হতে থাকে। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় হওয়ায় সংসারের দায়িত্ব নিতে হয় চঞ্চলকে। নিজের ভবিষ্যৎ আর পরিবারের দুশ্চিন্তা তাকে কুরে কুরে খাচ্ছিল। তবে জীবনের পথে বাধা এলে থেমে না থেকে লড়াই করাই চঞ্চলের সিদ্ধান্ত। তিনি প্রশিক্ষণ শেষ করে চাচাতো ভাই নূর-মোহাম্মদ আরমানের সঙ্গে আলোচনা করে দর্শনা পুরাতন বাজার সমবায় মার্কেটে ‘আরমান ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স’ নামে একটি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে চঞ্চল তার সঞ্চিত ২০ হাজার টাকা এবং তার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। শুধু দোকানের ওপর নির্ভর না করে বাসাবাড়িতে ওয়্যারিং ও মেরামতের কাজও শুরু করেন। তার কঠোর পরিশ্রম আর দক্ষতা তাকে ধীরে ধীরে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। বর্তমানে তার ব্যক্তিগত বিনিয়োগ ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা, এবং ব্যবসায় তার শেয়ার ৪০%। দোকান থেকে প্রতি মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করছেন, পাশাপাশি হাউজ ওয়্যারিং ও সি.সি. ক্যামেরা স্থাপন ও সার্ভিসিং করেও ১৫-১৮ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন।
অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই চঞ্চল প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার সম্পদ (ফ্রিজ, মোটরসাইকেল, খাট) ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার দোকানে ১০-১২ লক্ষ টাকার মালামাল রয়েছে। চঞ্চল শুধু উদ্যোক্তা হয়ে থেমে যাননি, নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি দর্শনা সরকারি কলেজে ডিগ্রি ফাইনাল ইয়ারে অধ্যয়নরত, আর তার ছোট ভাই এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেমন আছেন জানতে চাইলে চঞ্চল উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, “অনেক ভালো। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট ভাইয়ের পড়ার খরচ এবং পরিবারের মাসিক খরচ বহন করতে পারছি—এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। তিন মাসের প্রশিক্ষণ যে আমার জীবন বদলে দেবে, ভাবতেও পারিনি। এই প্রশিক্ষণ আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।”