জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দুর্যোগের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে যা আরও প্রকট। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বারবার আঘাতে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে থাকে প্রায় প্রতি বছরই। তবে এই দুর্যোগগুলোর সামনে আর অসহায় নয় বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার জনগণ। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের অধীন পরিচালিত Strengthening Community Preparedness, Rapid Response and Recovery in Bangladesh (এসিটি) প্রকল্প ২০১৭ সাল থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করে চলেছে এ অঞ্চলে।
এসিটি প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো দুর্যোগ ঝুঁকি কমানো এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও যুব সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা, পাশাপাশি কমিউনিটির সাধারণ মানুষদেরও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
২০২৪ সালে, বাকেরগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে ১০টি ব্যাচে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়। প্রতিটি ব্যাচে ৩০ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। এতে ১৩০ জন নারী এবং ১৭০ জন পুরুষ মিলে মোট ৩০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের এলাকাভিত্তিক দুর্যোগের প্রকৃতি ও স্থানীয় ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ মোকাবিলায় কমিউনিটির ভেতরে থাকা সম্পদ ও সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি, ঘূর্ণিঝড়ের সতর্ক সংকেতের স্তর অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ, এবং দুর্যোগ-পূর্ব ও পরবর্তীকালে করণীয় নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ শেষে নুরজাহান বেগম নামের এক অংশগ্রহণকারী বলেন, “আগে আমরা সতর্ক সংকেত শুনে কী করতে হবে বুঝতাম না। এই প্রশিক্ষণে শিখেছি কখন, কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এখন আমি জানি কীভাবে আমার পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে নিয়ে যাব।”
একইভাবে, কমিউনিটির যুব সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, “এই প্রশিক্ষণ থেকে যে জ্ঞান পেয়েছি, তা শুধু আমার নিজের নয়, সমাজের সবার উপকারে আসবে। আমি শিখেছি দুর্যোগের সময় কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয় এবং অন্যদের সাহায্য করতে হয়।”
এসিটি প্রকল্পের এই প্রশিক্ষণগুলো শুধু ঝুঁকি হ্রাসের জন্যই নয়, বরং মানুষের জীবনকে রক্ষা করার একটি সুসংগঠিত প্রচেষ্টা। এতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের এবং তাদের কমিউনিটির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এমন উদ্যোগই স্থানীয় জনগণকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে এবং একটি নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যাচ্ছে।