মো. আশরাফুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামে গড়ে তুলেছেন কেঁচো সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘কৃষি খামার’। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে তিনি অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন। আশরাফুল চায়ের দোকানদার ছিলেন পাশাপাশি মাঠে দিন মজুরের কাজও করতেন। তার পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য চা দোকানীর পাশাপাশি একসময় ভেড়া পালন শুরু করেন। এ কাজে তেমন অভিজ্ঞতা না থাকায় ভেড়া পালনে লাভবান হতে পারেননি। আর্থিকভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত হন।

এরপর বিকল্প ব্যবসা হিসেবে নিজ উদ্যোগে ছোট পরিসরে রিং দিয়ে কেঁচো সার উৎপাদনের কাজ শুরু করেন। শুরুর দিকে (২০২১ সাল) মাসিক গড় উৎপাদন ছিলো ১০ থেকে ১২ টনের মতো এবং কিছু আয় আসতে শুরু করলে তিনি অধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসাটি সম্প্রসারণের চেষ্টা করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মূলধন। স্থানীয়ভাবে এলাকার বিভিন্ন চাষীর কাছে তিনি কেঁচো সার বিক্রি করতে থাকেন, যেখানে মাসে খরচ বাদে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হতে থাকে।

আশরাফুলের ব্যবসার সম্ভাবনা দেখে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের Rural Microenterprise Transformation Project – RMTP প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে প্রকল্পভুক্ত করেন। জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাস ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কেঁচো সার যেমন উপযোগী, তেমন রাসয়ানিক সারের ব্যবহার রোধে এর বিকল্প নেই।  কেঁচো  সার ব্যবহার করলে ফসলের গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়, ফসল উৎপাদনে খরচ কম হয়। পাশাপাশি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে আর ফসল উৎপাদন বেশি হয়।

এ সকল বিষয় বিবেচনায় আশরাফুল ইসলামকে বড় পরিসরে কেঁচো সার উৎপাদনের জন্য প্রকল্প থেকে ২০২২ সালের জুন মাসে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।  প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত অনুদান ও নিজের জমানো কিছু টাকা দিয়ে আশরাফুল কেঁচো সার প্লান্টের অবকাঠামো বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে তার প্লান্টে সারের উৎপাদন মাসে ৭০ থেকে ৭৫ টন। বর্তমানে তার খামারে স্থায়ী ১০ জন এবং অস্থায়ী ২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের কেঁচো সার বিক্রির চেইন তৈরির জন্য আরএমটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বড় কোম্পানি যেমন এসিআই, লাল তীর এবং মার্জিন এগ্রোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে কেঁচো সার এবং জৈব সার বিক্রি করে উৎপাদন খরচ বাদে মাসে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা মুনাফা করছেন আশরাফুল। তাকে দেখে স্থানীয়ভাবে আরো ১০ জন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যারা কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও কেঁচো সার বিক্রয়ে আশরাফুলকে সহায়তা প্রদান করছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার খামার পরিদর্শনে আসেন। ইতিমধ্যে আশরাফুল ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ২০২৩ এর সেরা কৃষি উদ্যোক্তা পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে তার সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে, একজন প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন। এই সফলতার যাত্রায় ধারাবাহিকভাবে সহায়তা করার জন্য আশরাফুল ওয়েভ ফাউন্ডেশনের কাছে চির কৃতজ্ঞ।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt