ওয়েভ-এর সোলার ডিপ পাল্টে দিয়েছে কিষাণী মায়ার জীবন
অনেক স্বপ্ন থাকলেও অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণীর পর লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন মায়া। ঝিনাইদহেরমহেশপুর উপজেলার শ্যামকুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের মেয়ে মায়া মাত্র এগার বছর বয়সে বাবাকে হারান। মা-বাবা আর ভাই-বোন এই চারজনের সংসারে দিনমজুর বাবা ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী। একমাত্র বড় ভাইও এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। মা দরিদ্র পরিবারের গৃহিনী। বাবারঅংশ থেকে পাওয়া মাত্র ১৫ কাঠা জমিকে পুঁজি করে নিরুপায় মা সংসারের হাল ধরেন, সাথে কিশোরী মায়া।
বিয়ের পরেও মায়ার জীবনে সেই একই অবস্থা। স্বামী ছলেহিম দিনমজুর, রাজমিস্ত্রীর সহকারী। স্বামীর একার আয়, একটানা কাজও থাকে না।সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। বিয়ের ১৫ বছর পার হলেও তাদের কোলে আসেনি কোন সন্তান, পরিবারে নতুন মুখ দেখার জন্য শুরুকরেন ব্যয়বহুল চিকিৎসা। স্বামীর একার আয়ের সংসার এবং সব মিলিয়ে যেন অনটন বাড়তেই থাকে। চরম হতাশার মধ্যে মায়া তার স্বামীকেবোঝায় দু’জনে মিলে কিছু করার। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া মায়ের ১৫ কাঠা জমিতে চাষ শুরু করেন মায়া, যা নিজেই দেখাশুনা করেন। কিন্তু একজননারী হিসেবে নিয়মিত সেচ, সার ও পরিচর্যা- সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে থাকেন মায়া। চাষের অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে মায়া বলেন, “প্রথমেখুব সমস্যা হতো জমিতে পানি দেওয়া নিয়ে। মাটি খারাপ তাই একদিন পর পর ফসলে সেচ দিতে হতো। তখন প্রায় প্রতিদিন মাঠে আসতে হতো।স্বামী পরের কাজে ব্যস্ত থাকায় একজন মেয়ে মানুষের এতো মাঠে আসা অন্যরা ভালভাবে নিতো না। স্যালো মেশিনে পানি দেবার জন্য যার সাথেচুক্তি করা ছিল, সে দরকার মতো পানি দিতো না। কিন্তু এখন আর সে সমস্যা নেই। আমাদের মাঠে ওয়েভ-এর সোলার ডিপ বসানোয় তারানিজের থেকেই আমার জমিতে পানি দিয়ে দেয়। আমাকে পানির জন্যে আর মাঠে আসতে হয়না।”
বর্তমানে মাকে সাথে নিয়ে তিন জনের সংসার। চোখের পানি মুছতে মুছতে মায়া বলেন, “সন্তান হয়নি বলে আমাদের মনে অনেক কষ্ট, তারপরওঅনেক সুখে আছি। আমার স্বামী এখন রাজমিস্ত্রি, এলাকার সবাই ওর সুনাম করে। প্রায় প্রতিদিন কাজ থাকে, দিনে আয় হয় ৪৩০ টাকা। দু’বছরআগে নিজেদের জমানো ১২ হাজার টাকা দিয়ে আরও এক বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছি। আগে এক বিঘা পনের কাঠা জমিতে বোরো ধান চাষ করতেপানির জন্য খরচ হতো ৮৫০০ টাকা। এখন সোলার ডিপ থেকে পানি নিই, খরচ হয় মাত্র ৫০০০ টাকা। এখন মাঠেও কম আসতে হয়, অন্য কাজকরতে পারি। আবার এক সিজনে খরচও কমেছে ৩৫০০ টাকা। সময় মতো পানি দেয় বলে এখন ধানও হয় ভালো। জমি থেকে বছরে বোরো ধানহয় ৩৮/৩৯ মন, আর আমন ধান হয় ৩১/৩২ মন। সংসারে সারা বছরের জন্য ধান লাগে ২০/২৫ মন, বাকীটা বিক্রি করি। ধান বেচা টাকায় ৪৫হাজার টাকায় একটা গরু আর ১৩ হাজার টাকায় দুটো ছাগল কিনে পুষছি।” মায়া এখন স্বপ্ন দেখেন নিজে এক বিঘা জমি কিনে চাষাবাদবাড়ানোর, তার জন্য টাকা জমানো শুরু করেছেন। আর স্বপ্ন দেখেন আরও ভালো চিকিৎসা নিয়ে একদিন সন্তানের মুখ দেখবেন তারা।