কাউকে বাদ দিয়ে নয়, এমন লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ক্রিশ্চিয়ান এইড এর সহযোগিতায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন ও বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ (ইএলএমসি) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত, হিজড়া, চা-শ্রমিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নে কাজ করছে। এসব পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার, সক্ষমতা, সমাজে তাদের অবদান, বৈষম্য এবং প্রচলিত কুসংষ্কার ইত্যাদি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের প্রচলিত নেতিবাচক ধারণার পরিবর্তন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রকল্পের তৃতীয় বছরে সচেতনতামূলক ১০০টি নাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। নাটকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত করা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।

তিনটি নাট্যদল, যথাক্রমে নওগাঁর মান্ডের বাড়ে বাহা পোরাইনী যাত্রা গাওনা আখড়া এবং রাজশাহীর বাঁচার আশা সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মানওয়া নাট্যদল চারটি বিষয়ের উপর নাটক প্রর্দশন করে। জাতিগত ভেদাভেদের কুফল নিয়ে জাতের বড়াই, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে স্বীকৃতি, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ে স্বপ্নভঙ্গ এবং হিজড়া জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান অবস্থা ও অধিকারকে উপজীব্য করে আশ্রয় নাটকের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। উল্লেখ্য, মান্ডের বাড়ে ও মানওয়া স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাঁচার আশা হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত নাট্যদল। নাটকগুলোর প্রদর্শনী হয়েছে জুলাই-অক্টোবর ২৩ সময়কালে। বিভিন্ন জনবহুল স্থানে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীগুলোতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি, বিভিন্ন পেশার মানুষ, উল্লিখিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। আনুমানিক প্রায় দশ সহস্রাধিক দর্শক এ নাটকগুলো উপভোগ করেছেন এবং প্রদর্শনীকালে ও প্রদর্শনী শেষে তাদেও মতামত ব্যক্ত করেছেন।

এ প্রদর্শনীগুলোর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাটকের প্রতিটি দৃশ্য শেষে একজন কথক দর্শকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং ওই দৃশ্যে উপস্থাপিত হটনার বিশ্লেষণে যান। ফলে দর্শকরা প্রতিটি দৃশ্য সম্পর্কে তাদের মতামত ও প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে প্রদানের মাধ্যমে নাটকটির সাথে একাত্মতা বোধ করেন। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ঝলমলিয়া বাজারে জাতের বড়াই নাটকটি দেখে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মী মতিন সরকার বলেন, “পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা হিজড়া বা অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে নিজের সম্প্রদায়কে প্রাধান্য দিতাম। এখন বুঝতে পারছি, তারাও আমাদের সমাজের অংশ। তাদেরও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এখন থেকে আমি তাদেরকে সহজে সেবা দেয়ার জন্য কাজ করব। স্বীকৃতি নাটকে সরকারি অফিসের দারে দারে ঘুরে ব্যর্থ হওয়া শিবুর বউয়ের চরিত্রর সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেয়েছেন পুঠিয়ার সেরাপিনা সরেন। স্বপ্নভঙ্গ নাটক প্রদর্শনীর পরে দুর্গাপুর উপজেলার নারকেলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের স্কুলে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য র‌্যাম্প তৈরির প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt