বাংলাদেশের কৃষি খাত দিন দিন আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠলেও অনেক কৃষক এখনো প্রচলিত চাষাবাদ পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল। যান্ত্রিকীকরণের অভাবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব কৃষকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)-এর সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গার মদনা ইউনিয়নে সমলয় ধান চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে, যা কৃষকদের জন্য একটি টেকসই ও কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করছে।

কৃষি খাতে টেকসই পরিবর্তন আনতে হলে শুধুমাত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করাই যথেষ্ট নয়, বরং কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যবহারিক জ্ঞান প্রদান করাও জরুরি। এ লক্ষ্যেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ জন ধানচাষিকে একত্রিত করে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমলয় চাষের গুরুত্ব ও সুফল সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে, যাতে তারা বুঝতে পারেন কীভাবে একসঙ্গে রোপণ ও সংগ্রহ করলে উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রম সাশ্রয়, এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

এ কার্যক্রমের অধীনে কৃষকদের যান্ত্রিক চাষাবাদে দক্ষ করে তুলতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশন সরাসরি মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, যাতে তারা নিজেরাই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কৃষকদের উৎসাহিত করতে পারেন। এভাবে স্থানীয় পর্যায়ে একটি সহযোগিতামূলক কৃষি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে কৃষকরা একে অপরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন।

সমলয় চাষের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো উৎপাদিত ধানের মান উন্নত করা এবং একসঙ্গে বাজারজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষকদের একটি সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করছে, যাতে তারা বড় আকারে ধান বিক্রি করতে পারেন এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে পরিবেশসম্মত কৃষি পদ্ধতি চালুর লক্ষ্যেও কাজ করছে সংস্থাটি।

শুধু চাষাবাদে নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সমলয় চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমলয় পদ্ধতির ফলে সেচ ব্যবস্থাপনা সহজ হয়, রোগবালাই ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয় এবং কৃষকদের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হন, তেমনি সামগ্রিক কৃষি খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।

কৃষকদের সংগঠিত করে, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করে এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় সংযুক্ত করে ওয়েভ ফাউন্ডেশন কৃষির একটি টেকসই ও আধুনিক মডেল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এই উদ্যোগ সফল হলে শুধু কৃষকদের জীবিকা উন্নত হবে না, বরং বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt