বাংলাদেশের কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, যেখানে জিডিপিতে ১৮.৬৪% অবদান এবং ৬৪% শ্রমশক্তি কৃষিতে নিয়োজিত। তবে, কৃষির মোট খরচের ৪৩% সেচের জন্য ব্যয় করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১.৩৪ মিলিয়ন ডিজেল চালিত সেচ পাম্প ৩.৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানীর প্রসারে সৌর পাম্পের দ্বারা ডিজেল পাম্প প্রতিস্থাপন করে সেচ খাত থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক সেবাদানকারী কোম্পানি ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ (ইডকল) এর সহযোগী সংগঠন হিসেবে ওয়েভ ফাউন্ডেশন সৌরচালিত সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অধীন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারটি জেলায় (চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর) ইতোমধ্যে ৩.৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮৩টি সৌর পাম্প এবং ১২০ কিলোওয়াট গ্রিড ইন্টিগ্রেশন সিস্টেম স্থাপিত হয়েছে এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে আরও ৫৬টি (মোট ২.৫ মেগাওয়াট) সৌর পাম্প ও ১.৭ মেগাওয়াট গ্রিড সিস্টেমের কাজ চলমান।
প্রতিটি সৌর পাম্প বছরে ১২ হাজার ৫০০ লিটার ডিজেল সাশ্রয় করে এবং ৩৪ হাজার কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমায়। ৮৩টি পাম্প মিলিয়ে বছরে প্রায় ৯.৫ লাখ লিটার ডিজেল, ১০.৪৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এবং ২ হাজার ৫৩৭ টন কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব হচ্ছে। এসব পাম্প প্রতিদিন প্রায় ৩.৫ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করে, যা জাতীয় গ্রিডের উপর চাপ কমায়। তদুপরি, জাতীয় গ্রিডে বছরে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে প্রতিটি পাম্প অতিরিক্ত ১.৫ লাখ টাকার আয় এনে দিচ্ছে।
কৃষকদের জন্য সৌর সেচ পাম্প ব্যবহারে সেচের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এক বিঘা (৩৩ দশমিক) জমিতে সেচ দিতে এখন ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হয়, যেখানে পূর্বে খরচ ছিল ৭-৮ হাজার টাকা। প্রায় ৩৫ হাজার একর জমিতে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে ৫.৫ লাখ মন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হচ্ছে, সেচ ব্যয় ৪০% হ্রাস পাচ্ছে এবং অতিরিক্ত শ্রমিকের খরচ বাঁচানো হচ্ছে। কৃষকরা ৪৫ দিন মাঠে না গিয়ে অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থেকে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকা আয় করতে পারছেন। আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপলাইন ও রাইজার ব্যবহারের ফলে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পানি অপচয় রোধ হচ্ছে। এই প্রকল্প শুধু পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগই নয়, কৃষকদের জীবনধারা ও দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করছে।