পটুয়াখালির গলাচিপা উপজেলার বাহের গজালিয়া গ্রামের সেফালি বেগমের জীবনটা ছিল সংগ্রামের আর হতাশার গল্প। অষ্টম শ্রেণী পাশ করার পর দারিদ্র্যের কারণে থেমে যায় তার পড়াশোনা। স্বামী জাকির মিয়ার দিনমজুরের আয়ে কোনোমতে চলত সংসার। জমিজমা না থাকায় চাষাবাদ করার সুযোগও ছিল না। এর মধ্যে স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে সেফালির জীবনে নেমে আসে আরেক দফা বিপর্যয়। পরিবার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে নতুন কোনো উদ্যোগ নেয়া ছিল অকল্পনীয়।
তবে হাল ছাড়েননি সেফালি। আশপাশের মানুষের পরামর্শে তিনি যোগ দেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ‘অতি দরিদ্র মানুষের জন্য পাথওয়েস টু প্রোসপারিটি- ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (পিপিইপিপি-ইইউ)’ প্রকল্প পদ্মা প্রসপারিটি গ্রাম কমিটিতে (পিভিসি)। পিভিসির আলোচনায় তিনি নিয়মিত অংশ নিতে শুরু করেন। সেখান থেকেই ছাগল পালনের প্রতি আগ্রহ জন্মে তার। কারিগরি কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনি প্রথম দফায় ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন, ছাগলের জন্য ঘর তৈরি করেন। পাশাপাশি প্রকল্প থেকে পান ১৪ হাজার টাকার অনুদান। সেই টাকায় কেনেন ৫টি মা ছাগল।
প্রকল্পের দেওয়া উন্নত ছাগল পালন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে শুরু করেন ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১৮টি ছাগল, ২০টি দেশি মুরগি, ১৫টি হাঁস ও ২০টি কবুতর। সবজি বাগানও গড়ে তুলেছেন। প্রতিমাসে হাঁস-মুরগি ও সবজি বিক্রি করে আয় করছেন ৭-৯ হাজার টাকা। ছাগলগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উৎপাদন ব্যয় বাদে লাভ হবে ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে তিনি দ্বিতীয় দফায় ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেন ব্যবসা সম্প্রসারণে।
এখন তার স্বামী জাকির মিয়াও সুস্থ হয়ে খামারের কাজে সেফালিকে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে ছাগলগুলোর সুরক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রমে তিনি পাশে থাকেন। তিনি বলেন, “ছাগল পালন করে যে লাভ হচ্ছে, অন্য কোনো ফসলেও এত লাভ আসেনি। তবে বর্ষায় সতর্ক থাকতে হয়।” তারা এখন ছাগল পালনের ঝুঁকি ও সতর্কতা সম্পর্কে সচেতন। সময়মতো টিকা প্রয়োগ করে তারা রোগের ঝুঁকি কমিয়েছেন। সেফালি বলেন, “প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ আর সঠিক পরামর্শ না পেলে আমি ছাগল পালন করলেও লাভবান হতাম না। সামনে আমাদের লক্ষ্য ছাগলের খামার আরও বড় করা।”