নাটোর জেলার সদর উপজেলার অন্তর্গত নীচাবাজার পল্লী গ্রামে ইসমাইল হোসেন ও তার স্ত্রী মোসা. আসমা বেগমের বসবাস। তার বাবার তেমন কোনো জায়গা-জমি ছিল না। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের সংসারে ইসমাইল হোসেন ছিলেন সবার বড়। অভাব-অনটনের সংসারে ছিল নানারকম অশান্তি। বাবা-মা বৃদ্ধ হওয়ায় তাদের কথা চিন্তা করে আসমা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ইসমাইল। বিয়ের পরে সংসার খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দুঃখ-কষ্ট আরও বাড়তে থাকে। এরইমধ্যে তাদের ঘর আলোকিত করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। ফলে দিন দিন সংসারের ব্যয়ভার আরও বাড়তে থাকে।
এমন সময় ইসমাইল সাইকেল মেরামতের দোকান করার বিষয়ে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেন। কিন্তু দোকান করতে প্রাথমিক পর্যায়ে যে মূলধনের প্রয়োজন তা তাদের ছিল না। আত্মীয়-স্বজনের সাথে কথা বলে, তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন কূল-কিনারা পান নাই। একদিন এক প্রতিবেশীর নিকট হতে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির বিষয়ে জানতে পেরে ইসমাইল নাটোর সদর ইউনিটের অগ্রদূত পুরুষ সমিতিতে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে ইসমাইল সমিতিতে ভর্তি হন এবং ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ প্রথম দফায় ৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এর সাথে জমানো টাকা মিলিয়ে ১০০টি বাইসাইকেল ও প্রয়োজনীয় পার্টস্ ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ হতে থাকে। মাত্র এক বছর পর ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ পুনরায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন হতে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ কাঠা জমি ক্রয় করেন এবং সাইকেলের ব্যবসা আরও বড় করেন।
এক বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের ব্যবসায় সমৃদ্ধি আসে। সাইকেল রাখার গ্যারেজ করার লক্ষ্যে পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। আগের ঋণ পরিশোধ হলে ২০২১ সালে পুনরায় ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। সাইকেলের ব্যবসা ও বাড়ি ভাড়া থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। তার দোকানে এখন ৪০০টির বেশি সাইকেল আছে, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ লক্ষ টাকা। এভাবে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে প্রতি বছর একটু একটু করে ইসমাইল সাইকেলের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে থাকেন।
যে ইসমাইল হোসেন এবং তার স্ত্রীর গ্রামে কোন গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, অবহেলিতভাবে বসবাস করতেন, সেখানে এখন তার পরিচিতি এলাকা জুড়ে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ডাক পেয়ে থাকেন, এলাকার মানুষ ইসমাইলের কাছে সাইকেলের কাজ শিখতে আসেন। বর্তমানে তার দোকানে ৬ জন লোক কাজ করেন। তাকে অনুকরণ করে আরো অনেকে ব্যবসা করার জন্য উদ্যোগী হচ্ছেন। ইসমাইল তার এ অভাবনীয় উন্নয়নে গর্ববোধ করেন এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের হাত ধরে দারিদ্র্যকে জয় করতে পেরে সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সাইকেল ব্যবসাটি আরও বড় করতে চান, যাতে সেখানে আরো অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ডিলারশিপ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ আকারে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে চান ইসমাইল।