কৃষি শুধু জীবিকার উৎস নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎও গড়ে দেয়। টেকসই কৃষি নিশ্চিত করা না গেলে খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষা উভয়ই হুমকির মুখে পড়বে। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে, চুয়াডাঙ্গায় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ‘গো গ্রিন’ কর্মসূচির আওতায় দুটি নতুন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলার কোষাঘাটায় অবস্থিত ‘গো গ্রিন সেন্টারে’ ১৫ মার্চ, ২০২৫ শনিবার বিকেল ৩টায় কৃষক, নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা ও কৃষি বিশেষজ্ঞদের একত্রিত এক অবহিতকরণ সভায় এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রকল্প দুটি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চাকে এগিয়ে নেওয়ার দিগন্ত খুলে দেবে। ‘টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য ফলের ভ্যালু চেইন উন্নয়ন ও অনুশীলন প্রতিষ্ঠা’ প্রকল্পটি কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এটি উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে অধিক ফলন নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করে জৈব সার ও উন্নত সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে টেকসই কৃষির মডেল তৈরি করবে।

অন্যদিকে, ‘প্রতিবেশবান্ধব ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন পদ্ধতি সম্প্রসারণকল্পে এগ্রোইকোলজিক্যাল লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা’ প্রকল্পটি কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি নতুন প্রজন্মের কৃষি বিশেষজ্ঞ তৈরি করবে। কৃষকেরা এখান থেকে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশসম্মত কৃষি ব্যবস্থাপনার কৌশল শিখতে পারবেন, যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, “কৃষির আধুনিকায়ন শুধু কৃষকদের জীবনমান উন্নত করবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষকেরা আরও লাভবান হতে পারবেন।” ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “টেকসই কৃষি চর্চা, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির সমন্বয়ই আমাদের ভবিষ্যৎ কৃষিকে শক্তিশালী করতে পারে।” ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী বলেন, “আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করব, যাতে তারা কম খরচে বেশি উৎপাদন করতে পারেন এবং পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চায় আগ্রহী হন।”

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, এবং দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথী মিত্র। তারা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। দামুড়হুদা উপজেলার প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) দেবাশীষ কুমার দাস সহ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, মোঃ হুমায়ন কবির, আজাদ মালিথা, রাজিব হাসান কচি, এডভোকেট মানিক আকবর, শাহ আলম সনি এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তারা কৃষকের ক্ষমতায়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বাজার সংযোগ ও টেকসই কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থার উপ-পরিচালক জহির রায়হান। প্রকল্পের বিস্তারিত ধারণা ব্যাখ্যা করেন সহকারী পরিচালক নির্মল দাস, এবং ‘গো গ্রিন’ কর্মসূচির সামগ্রিক কার্যক্রম উপস্থাপন করেন উপ-পরিচালক নাজমা সুলতানা লিলি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংস্থার গো গ্রীন সেন্টারের সিনিয়র সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের এই দুটি নতুন উদ্যোগ শুধু কৃষকদের জন্যই নয়, বরং সামগ্রিক কৃষি খাতের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ উদ্যোগ টেকসই কৃষি ব্যবস্থার রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Contact Us

We're not around right now. But you can send us an email and we'll get back to you, asap.

Not readable? Change text. captcha txt