পটুয়াখালীর গলাচিপা ও গোলখালী ইউনিয়নের কৃষকদের মাঝে এখন রয়েছে স্বস্তি, মুখে হাসি। এর পেছনে রয়েছে পাথওয়েজ টু প্রসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল-ইইউ (পিপিইপিপি-ইইউ) প্রকল্পের এক ভিন্নধর্মী উদ্যোগ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, পিকেএসএফ এবং সংস্থার যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার একটি প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে।
উৎপাদনশীলতার উন্নতি হলেও সঠিক বিপণন ব্যবস্থার অভাবে গলাচিপার কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এই সমস্যার সমাধানে ২০২৪ সালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মএলাকার দুটি স্থানে কৃষি সেবা ও কৃষি পণ্য বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। একটি গলাচিপা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে। অন্যটি গোলখালী ইউনিয়নের কিসমত হরিদেবপুর গ্রামে।
এই কেন্দ্রগুলো একজন কৃষি উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। কেন্দ্রগুলোর ঘর নির্মাণ ও উপকরণ কেনার জন্য প্রকল্প থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র পণ্য বিক্রির স্থান নয়; এটি কৃষকদের জন্য একটি সমন্বিত সেবা কেন্দ্র। কেন্দ্রগুলোতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ পণ্য সরাসরি বিক্রি করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়াও পাচ্ছেন সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ; মাছের পোনা, খাদ্য এবং হাঁস-মুরগির বাচ্চা ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ; এবং কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে মতবিনিময় এবং সমস্যার সমাধান।
গোলখালী ইউনিয়নের কিসমত হরিদেবপুর গ্রামে অবস্থিত কৃষি বিপণন কেন্দ্রটি ইতোমধ্যেই কমিউনিটিতে সাড়া ফেলেছে। সপ্তাহে তিনদিন এখান থেকে স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কিনে নিয়ে যান। ট্রাকভর্তি পান ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে।
একজন কৃষক বলেন, “এই কেন্দ্র আমাদের শুধু ন্যায্যমূল্যই দেয়নি, আমাদের উৎপাদনের কাজকে আরও উৎসাহিত করেছে। আমরা এখন আমাদের পণ্য সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে পারি, যা আগে কল্পনাও করিনি।”
আরেকজন উদ্যোক্তা জানান, “কেন্দ্র থেকে কৃষকরা শুধু পণ্য বিক্রি নয়, প্রয়োজনীয় উপকরণও সহজেই পাচ্ছেন। এটি কৃষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।”
এই কেন্দ্রগুলো শুধু একটি বিপণন প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতি এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের একটি সফল মডেল। কৃষকদের জন্য এই কেন্দ্রগুলো এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে তারা তাদের পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য লাভ করছেন।